ছিনতাইয়ের টাকায় কিনেছেন জমি, করছেন বাড়ি!

প্রকাশকালঃ ২৮ মে ২০২৩ ০৬:০২ অপরাহ্ণ ২৬৮ বার পঠিত
ছিনতাইয়ের টাকায় কিনেছেন জমি, করছেন বাড়ি!

জেন্ট ব্যাকিংয়ের টাকা ছিনতাই করে কেউ কিনেছেন জমি, কেউ তৈরি করছেন বাড়ি। সাভারে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে এমন সব তথ্য। উদ্ধার হয়েছে ছিনতাইয়ের ১১ লাখ টাকা। জব্দ করা হয়েছে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত প্রাইভেটার কারটিও।

রবিবার (২৮ মে) দুপুর ১টার দিকে সাভার মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। এর আগে গতকাল ২৭ মে পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার আদর্শ নগর এলাকা থেকে জসিম উদ্দিন নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন মাগুরা সদর থানার রাঘবদাইড় গ্রামের মৃত জয়নুদ্দিনের ছেলে মো. শিমুল (৩৬), বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার বাটাজোর গ্রামের মৃত কাদের বেপারীর ছেলে মো. তাওহিদ ইসলাম (৪৫) ও পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানার ঠাকুরহাট বাজারের রামবল্লভ এলাকার কালু হাওলাদারের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (৪৫)।


তারা সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা একাধিক মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত ৭ মে সকাল ১১টার দিকে সাভারের উলাইলের আল-মাদানী রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে গাড়ি শনাক্ত করা হয়।


পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তিন আসামির অবস্থান শনাক্ত করে গতকাল সকাল ১০টার দিকে পটুয়াখালীর দশমিনা থানার আদর্শ নগর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে জসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে জসীমের দেওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে রাত ১০টার দিকে শিমুল ও তাওহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকেও ছয় লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।


ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও পুলিশের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার সময় শিমুল ও চালক তাওহিদ সাদা প্রাইভেটকার নিয়ে মহাসড়কের এক পাশে অপেক্ষা করতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর টাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে এজেন্ট ব্যাকিং মার্কেটিং অফিসার হাবিবুর রহমান ও নিরাপত্তাকর্মী নাইম মহাসড়কের ওপার থেকে এপারে পার হয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। নাইমের কাঁধে ছিল টাকার ব্যাগ। এ সময় আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা প্রাইভেটকারটি মুহূর্তেই কাছে এসে গাড়ির জানালা খুলে ব্যাগ টেনে নেয়। এর আগে তাদের আরেক সদস্য জসিম ভুক্তভোগীদের পেছনে থেকে তাদের অবস্থান শিমুলকে অবহিত করছিল। পরে তারা সবাই একত্রিত হয়ে টাকা ভাগ করে নেয়।


গ্রেপ্তার তিনজনই ঘটনার সাথে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। তবে ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা বিষয়টি নিশ্চিত হতে গ্রেপ্তার তিনজনের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী ইসলামী ব্যাংকের উলাইল এজেন্ট শাখারমার্কেটিং অফিসার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ৭ মে সকাল ১১টার দিকে আমাদের সাভারের উলাইল এজেন্ট থেকে জমাকৃত টাকা হেমায়েতপুরের মূল শাখায় জমা দেয়ার জন্য যাচ্ছিলাম। এ সময় আমার সাথে নিরাপত্তাকর্মী নাইম ইসলাম ছিল। পরে বাসে ওঠার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই একটি প্রাইভেট কার এসে নাইমের কাধে থাকা ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়। এতে নাইম পড়ে যায়। আমি ও নাইম গাড়ির পেছনে দৌড়লেও গাড়িটিকেও ধরতে পারিনি। গাড়ির নম্বর টিও বুঝতে পারিনি। পরে থানায় মামলা করি।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করাটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই আমরা গুরুত্বের সাথে কাজ করছিলাম। প্রথমে প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করি। কিন্তু তারা ভুল তথ্য দিয়ে গাড়ি কিনেছিল। তাদের উদ্দেশ্যেই ছিল অপরাধে ব্যবহার করা। পরে গাড়ির আগের মালিকের সন্ধান পাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র পাই। কিন্তু সেই মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারীর ঠিকানা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। কিন্তু সেই কিশোর ছেলে চুরির দায়ে জেল হাজতে। তার সাথে যোগাযোগ করতে জানতে পারি মোবাইল ও সিমটি তার প্রতিবেশীর বাসা থেকে চুরি করেছিল। পরে সেই প্রতিবেশী জসিমের বাসায় গেলেও তালাবদ্ধ। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করলে রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। জসিমের সূত্র ধরে বাকী দুজন শিমুল ও তাওহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরমধ্যে জসিম তার ভাগের টাকায় বাড়ি তৈরি কাজ করছেন। শিমুল তার গ্রামের বাড়িতে জমি কিনেছেন ও তাওহিদ পরিবারের চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন।