প্রকাশকালঃ
১৮ জুলাই ২০২৩ ০৩:০০ অপরাহ্ণ ২৩৬ বার পঠিত
আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন আপনি ব্যবসা শুরু করবেন—আপনাকে অভিনন্দন! নতুন ব্যবসা উত্তেজনা প্রশমন করে এবার কাজে লাগুন, সমপূর্ণ পরিকল্পনাকে এমন ভাবে ভাগ করে নিন যাতে আপনার জন্য সকল কাজের ব্যবস্থাপনা সহজ হয়।
করতে হবে এমন কাজের তালিকা দেখে আপনি হয়ত অসহায়বোধ করবেন কিন্তু চিন্তা করবেন না; আমি আপনার জন্য ‘করতে হবে’ এমন কাজগুলো তালিকা আকারে দিচ্ছি যাতে আপনার বুঝতে সুবিধা হয় কোন কাজগুলো প্রথমে করবেন এবং কোন কাজগুলো পরবর্তীতে করনীয়।
আপনার ব্যবসার গ্রহণ যোগ্যতা যাচাই করুন:ব্যবসা কোন চ্যারিটি নয়, ব্যবসার প্রথম ও শেষ কথা হল মুনাফা। নিজেকে সত্যের মুখে দাড়া করান। আপনার নতুন ব্যবসা এমন হতে হবে যেন আপনি এটা করে কিছু মুনাফা অর্জন করতে পারেন। নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনি যদি ক্রেতা হন তবে কি আপনি কি আপনার এই সেবা না পণ্য টি কিনবেন? একটু পরিসংখ্যান করুন, এই পণ্য বা সেবার পিছনে আপনার ব্যয় কত? একজন ক্রেতা কি সর্বচ্চ মূল্য দিবে যাতে আপনি মুনাফা করতে পারেন? আপনার পণ্য বা সেবার সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য কিভাবে পরিসংখ্যান বা প্রশ্নের মুখামুখি হবেন তা নিয়ে একটি ভিন্ন পোস্ট লিখবো। মোট কথা যাচাই করুন আপনার এই পণ্য বা সেবা দীর্ঘ মেয়াদে আপনাকে মুনাফা দিতে পারবে কি না।
ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি করুন :
আপনার হয়ত মনে হতে পারে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছাড়া ও আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন কিন্তু আর্থিক ধারনা সমন্বিত একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা আপনাকে এর গভীরে চিন্তা করার সুযোগ দিবে। এটা হবে আপনার ব্যবসায়ের জন্য একটি জীবন্ত সহায়িকা যেটা আপনাকে প্রতিদিনের গন্তব্যে পোঁছাতে সাহায্য করবে।
টাকা জোগাড় করুন:
নতুন ব্যবসা বাজারে প্রবেশ করতে আপনার ধারনার চেয়ে ও বেশী সময় নেয়। আপনি জানেন আপনি কি ধরনের ব্যবসায়ের পরিকল্পনা করেছেন এবং তাতে কি পরিমাণ মূলধন লাগবে। এছাড়া প্রথম বছর আপনার ব্যক্তিগত খরচ কোথা থেকে আসবে তা জানুন। হয়ত আপনার ব্যক্তিগত খরচ (সাংসারিক ) আপনার সঞ্চিত টাকা বা চাকুরী, কিংবা স্ত্রীর চাকুরীর থেকে আসবে এবং ব্যবসা শুরুর জন্য আপনার আর্থিক বিনিয়োগ প্রয়োজন —এমন জিনিসগুলো আগে থেকেই পরিস্কার হউন। এমনটি নয় যে আপনি ব্যবসা শুরু করলেন এবং পরে চিন্তাগ্রস্থ হলেন যে আমার এই টাকা কোথা থেকে আসবে। সুতরাং সকল আর্থিক উত্স সমপর্কে জানুন।
পরিবারের সহযোগিতা সাথে রাখুন :
আপনার ব্যবসায়ের শুরুটা যেন পরিবার পরিজন এবং বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু হয়। তারাই আপনার ব্যবসার রেফারেল বিজনেস হিসেবে কাজ করবে। আপনার পণ্য বা সেবার গ্রাহক যেন আপনার পরিবার পরিজন এবং বন্ধু বান্ধব হয়, অন্যথায় আপনার ব্যবসা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আপনার ব্যবসায় আপনার পরিবার যেন আপনার পাশে (শাররিক, মানুষিক ও আর্থিক ভাবে) থাকে। তবে এমনটি করতে গিয়ে কারো উপর জোড় সৃষ্টি করবেন না। ব্যবসায়ের জন্য নাম ঠিক করুন:ব্যবসায়ের নাম ঠিক করার জন্য আপনার পণ্য বা সেবার গ্রাহক কারা এই কথাটি মাথায় রাখুন। অন্য কোমপানির নাম নকল করে নামকরণ করবেন না। কোমপানি রেজিস্ট্রেশান ওয়েবসাইট থেকে নিচ্চিত হউন যে আপনার বাছাইকৃত নামটি ইতিমধ্যে অন্য কোন কোমপানি রেজিস্টার করেছে কিনা।
কোমপানির জন্য ডোমেইন নাম রেজিস্টার করুন:আপনার ব্যবসায়ের নামের সাথে মিল রেখে একটি ডোমেইন নাম রেজিস্টার করুন। আপনি যদি ফ্রি ডমিন রেজিস্ট্রেশান করেন তবে এমনটি মনে হতে পারে যে হয়ত আপনার ব্যবসাটি সত্যিকারে ব্যবসা না অথবা আপনি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা করে চান না । এছাড়া ফ্রি ডমিন সাইটগুলো মানুষের কাছে অতটা বিশ্বাসযোগ্য না।
কোমপানি গঠন করুন :
দেশের প্রচলিত আইনে আপনা (corporation, LLC, sole proprietorship) কি হবে তা পরামর্শকের সাথে আলোচনা করুন। আইন বিষয়ক দিকগুলো একজন কোমপানি গঠনে অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন যা আপনাকে ভবিষ্যতে বিপদ থেকে নিরাপদ রাখবে।
টিআইএন অথবা ইআইএন এর জন্য আবেদন করুন :
ট্যাক্স পরিচয় নাম্বার বা এমপ্লয়ের পরিচয় নাম্বারের জন্য আবেদন করুন। দেখে নিন দেশের প্রচলিত আইনে কোনটা প্রযোজ্য। এটা আপনার কোমপানি নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন হবে। এছাড়া বছর শেষে যখন ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করবেন তখন প্রয়োজন হতে পারে।
ওয়েবসাইট সেট আপ করুন :
এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা আপনাকে মানুষের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতা দিবে। একটি ভালো ওয়েবসাইট তৈরির জন্য যেমন ভালো ডেভেলপার প্রয়োজন, তেমনি তথ্য সমন্বিত করার জন্য একজন ভালো কন্টেন্ট রইটারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। একটি ভালো ওয়েবসাইট আপনাকে বছরে হাজার টাকা বাজারিকরন খরচ থেকে বাঁচিয়ে দিবে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল গুলো রেজিস্টার করুন :
সোশ্যাল মিডিয়া গাইড লাইন অনুসরণ করে প্রোফাইল গুলো রেজিস্টার করুন। ব্যক্তিগত প্রোফাইল কিংবা কোমপানি পেইজ তৈরি করার জন্য কোন পেশাধারীর সাহায্য নিতে পারেন। এটা আপনার পণ্য বা সেবার বাজারিকরন সহজ করবে। পরবর্তীতে ছোট ব্যবসার সামাজিক মাধ্যম ব্যবস্থাপনার আরেকটি ভিন্ন লিখা লিখব।
দোকান বা অফিসের জায়গা ভাড়া করুন :
আপনার ব্যবসা যদি সমপূর্ণ ঘরোয়া না হয় তবে দোকান বা অফিসের জায়গা ভাড়া করুন। যদি খুচরা বিক্রির দোকান হয় তবে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখবেন যেমন মানুষের সহজ যাতায়েত, আরামে বাজার করতে পারে এতটুকু খোলা জায়গা রাখা, শাররিক ও আর্থিক নিরাপত্তা ও অন্যান্য কারণ যেগুলো গ্রাহকদের আরামে শপিং করা থেকে বিরত রাখে। মনে রাখবেন, যদি আপনার ব্যবসার জন্য অফিস বা দোকানের প্রয়োজন না হয় তবে কোন জায়গা ভাড়া করতে যাবেন না কারণ এটা আপনার প্রতি মাসে অতিরিক্ত। নতুন ব্যবসার প্রতিষ্ঠাতা আপনাকে অনেক বেশি মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে, পরিচিত-অপরিচিত সকলকে জানাতে হবে আপনি এই ব্যবসায় আছেন। এজন্য বেশি করে বিজনেস কার্ড অর্ডার করুন। এটা আপনার জন্য সস্তা এবং যদি পরিবর্তন করতে হয় তবে পরিবর্তন করে পুনরায় অর্ডার করতে পারবেন। এটা আপনার পেশাদারিত্বের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা আনবে একটি ব্যবসায়িক ব্যাংক হিসাব খুলুন। এটা আপনার জন্য ভালো যে আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পৃথক রাখা। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সমপূর্ণ স্বচ্ছ ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিবেন।
ব্যবসায়িক হিসাবরক্ষণ প্রতিস্থাপন করুন :
আপনার ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত করে একটি হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি স্থাপন করুন। বাজারে অনেক হিসাবরক্ষণ সফটওয়্যার আছে, আপনার ব্যবসার সাথে মিল রেখে একটি হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি নির্বাচন করুন, ইচ্ছা করলে ইআরপি সফটওয়্যার ও ব্যবহার করতে পারেন। আপনার হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি যদি ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত না হয় তবে সকল ডেবিট ও ক্রেডিট যেন ব্যাংক হিসাবের সাথে মিল থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। প্রয়োজনে একজন হিসাব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।