পবিত্র কোরআনে আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল-কাবিলের বর্ণনা
প্রকাশকালঃ
১৩ জুলাই ২০২৩ ১২:১২ অপরাহ্ণ ৩৩৫ বার পঠিত
পবিত্র কোরআনে আদম (আ.)-এর দুই পুত্রের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের একজনের নাম ছিল হাবিল, অন্যজনের নাম ছিল কাবিল। কাবিল আদম (আ.)-এর প্রথম সন্তান, আর হাবিল ছিল তার ছোট। কোরআনের বর্ণনা অনুসারে তাদের একজন (কাবিল) অপরজনকে হত্যা করেছিল।
তবে মানব ইতিহাসের প্রথম এই হত্যাকাণ্ডের কারণ কী ছিল তা কোরআন-হাদিসে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি। বেশির ভাগ ঐতিহাসিক এর পেছনে নারীঘটিত কারণ বর্ণনা করেন। এর ওপর ভিত্তি করে বলা হয়, ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ডের পেছনে আছে একজন নারী। তবে গবেষক আলেমদের অনেকেই নারীঘটিত বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলেছেন।
কোরআনে হাবিল-কাবিলের বর্ণনা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি তাদের আদম পুত্রদ্বয়ের যথার্থ ঘটনা শুনিয়ে দিন। যখন তারা উভয়ে কোরবানি পেশ করল। অতঃপর তাদের একজনের কোরবানি কবুল হলো। কিন্তু অপরজনের কোরবানি কবুল হলো না।
তখন একজন বলল, আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। জবাবে অপরজন বলল, আল্লাহ কেবল আল্লাহভীরুদের থেকেই কবুল করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াও, আমি তোমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াব না। আমি বিশ্বপ্রভু আল্লাহকে ভয় করি। আমি মনে করি, এর ফলে তুমি আমাকে হত্যার পাপ ও তোমার অন্য পাপগুলোর বোঝা নিয়ে জাহান্নামবাসী হবে।
আর সেটাই হলো অত্যাচারীদের কর্মফল। অতঃপর তার মন তাকে ভ্রাতৃহত্যায় প্ররোচিত করল এবং সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো। অতঃপর আল্লাহ একটি কাক পাঠালেন। যে মাটি খনন করতে লাগল এটা দেখানোর জন্য যে কিভাবে সে তার ভাইয়ের মৃতদেহ দাফন করবে। সে বলল, হায়! আমি কি এই কাকটির মতোও হতে পারলাম না, যাতে আমি আমার ভাইয়ের মৃতদেহ দাফন করতে পারি। অতঃপর সে অনুতপ্ত হলো। (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২৭-৩১)
ভাইকে কেন হত্যা করেছিল কাবিল
হাবিল-কাবিলের ঘটনা বর্ণনায় বেশির ভাগ ঐতিহাসিক হত্যাকাণ্ডের পেছনে নারীঘটিত কারণ ছিল বলে উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, আদম (আ.)-এর শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করে কাবিল নিজের যমজ সুন্দরী বোনকে বিয়ে করতে চাইছিল। এ ক্ষেত্রে হাবিলকে পথের কাঁটা মনে করে তাকে চিরতরে সরিয়ে দিতেই তাকে হত্যা করেছিল সে। তবে গবেষক আলেমরা বলেন, এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো মুরসাল (যা অসম্পূর্ণ সনদে বর্ণিত), দুর্বল ও বানোয়াট। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এগুলো ইসরায়েলি উপকথা মাত্র এবং পরবর্তী সময়ে মুসলমান হওয়া সাবেক ইহুদি পণ্ডিত কাব আল আহবার থেকে বর্ণনাকৃত। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
প্রকৃত কারণ
আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) আরো বলেন, আদম পুত্রদ্বয়ের কোরবানি বিশেষ কোনো কারণে ছিল না বা এর সঙ্গে কোনো নারীঘটিত বিষয় জড়িত ছিল না। এর প্রকৃত কারণ ছিল হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা। কোরআনের বর্ণনা (সুরা মায়িদার ২৭ নম্বর আয়াত) থেকেই সেটি অনুমান করা যায়। হাবিলের কোরবানি কবুল হওয়ায় এবং কাবিলের কোরবানি কবুল না হওয়ায় কাবিলের মনে হিংসা তৈরি হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
এই ঘটনার পেছনে নারীঘটিত যে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়, তা যদি সত্যিও হয় তবু কোরআনের বর্ণনা থেকে বোঝায় এখানে হিংসাই ছিল প্রধান ও মুখ্য কারণ। যদিও কোরবানি কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে হাবিলের কোনো হাত ছিল না। তবে ভালোর প্রতি এই হিংসা ও আক্রোশ মন্দ লোকদের মজ্জাগত স্বভাব, যা পৃথিবীতে সর্বযুগে বিদ্যমান ছিল।