সারাদেশে ৫ লাখেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন গাড়ি
প্রকাশকালঃ
১৮ অক্টোবর ২০২৩ ০১:৩৯ অপরাহ্ণ ২২৮ বার পঠিত
সারাদেশে ৫ লাখেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসহীন গাড়ি রয়েছে। এ তথ্য খোদ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার নিজেই স্বীকার করেছেন এই তথ্য। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে, সবার চোখের সামনে এই গাড়িগুলো চলছে কীভাবে? বিআরটিএ কী করছে? ট্রাফিক পুলিশ বা হাইওয়ে পুলিশ কী এগুলো দেখছে না? এই গাড়িগুলো তো নতুন করে আসেনি, দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। তারা যদি দেখে থাকে তাহলে তো রাস্তায় এগুলো চলার কথা না। কিন্তু এখন পর্যন্ত তো চলছে? তাহলে তারা কি দেখেও না দেখার ভান করছে? নাকি পেছনে অন্য কোনো ঘটনা!
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে ঢাকায় বিআরটিএ ভবনে গতকাল মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ফিটনেসহীন এসব বাহনের মধ্যে ৩০ শতাংশ রাস্তায় চলে না। তবে যেগুলো চলে, সেগুলোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি রাস্তা উন্নত হওয়ায় ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওভার স্পিডের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বিভিন্ন সংগঠন দুর্ঘটনার যে তথ্য সংগ্রহ করছে তাতে গরমিল হয় জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার তথ্য এখন নিজেরা ওয়েবসাইটে দিচ্ছি। এখন আমরা বছরখানেক ধরে রিয়েল ডাটা কালেকশন করছি। এজন্য প্রকৃত পরিসংখ্যানে সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের রোড সেইফটি প্রজেক্টও চলছে।
বিআরটিএ কেন এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না? জানতে চাইলে নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের এনফোর্সমেন্ট দুর্বলতা আছে। কারণ বিআরটিএর পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট নেই। তাহলে কীভাবে আমরা এনফোর্সমেন্ট নিশ্চিত করব? শুধু রাজধানী ঢাকার যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্তত ১০০ জন ম্যাজিস্ট্রেট দরকার। কিন্তু আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট আছে পাঁচ-ছয় জন। এমন প্রেক্ষাপটে সামাজিক আন্দোলন গড়ে না তুললে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন। তদারকিতে আমাদের যেসব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছে তাদেরকে টার্গেট দেওয়া হয়েছে মামলার বিষয়ে।
একই সঙ্গে ছয় বিভাগীয় শহরে ছয় জন ম্যাজিস্ট্রেট যুক্ত হবে। ওভার স্পিড, দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন অপরাধে ড্রাইভারদের মার্কিংয়ে ডিমেরিট পয়েন্ট যোগ করা শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও বিআরটিএর পেশাদার চালকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চালকদের চক্ষু, রক্তচাপ ও রেন্ডম ব্লাড সুগার পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, অধিকাংশ চালক উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের সমস্যায় ভুগছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক চালকের চোখের কন্ট্রাক্ট সমস্যাও পাওয়া গেছে।
চালকদের মধ্যে কী ধরনের সমস্যা পাওয়া যায়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৪৯ জন চালকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ৪৭ জনের রক্তচাপ সমস্যা পাওয়া যায়। ব্লাড সুগারের সমস্যা পাওয়া যায় ৬৯ জনের, ধূমপানজনিত সমস্যা পাওয়া যায় ১০৯ জনের। এছাড়া, ২৮৯ জন চালকের চক্ষু পরীক্ষায় চোখের ভিশনে সমস্যা পাওয়া যায় ১৬৪ জনের, অন্যান্য চোখের সমস্যা পাওয়া যায় ৫৯ জনের ও চোখের কন্ট্রাক্ট সমস্যা পাওয়া যায় আট জনের।
আগামী ২২ অক্টোবর জাতীয় সড়ক নিরাপদ দিবস উপলক্ষে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে শিক্ষা ভবন হয়ে হাইকোর্ট মোড় পর্যন্ত, মৎস্য ভবন মোড়, ফার্মগেট থেকে জাহাঙ্গীর গেট হয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত, সার্ক ফোয়ারা, শেরাটন মোড়, বিজয় সরণি মোড় থেকে হেলিকপটার মোড়, তেজগাঁও ফ্লাইওভার থেকে সওজ ভবন পর্যন্ত সাজানো হবে বলে জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। এছাড়া সাতরাস্তার মোড় থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্ত, হাইকোর্ট সংলগ্ন কদম ফোয়ারা, মতিঝিলের শাপলা ও বলাকা চত্বর, মেট্রো রেলের দিয়াবাড়ী থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত মূল রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথসমূহ, ফুটওভারব্রিজ, সব স্টেশন, ইন্টারসেকশন, গোলচত্বর ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার দিয়ে সজ্জিত করা হবে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাস টার্মিনালে জনসচেতনতামূলক লিফলেট, স্টিকার বিতরণ ও ব্যানার প্রদর্শন করা হবে।