শুক্রবার ও শনিবার টানা চারবার ভূমিকম্পে নরসিংদী এলাকায় প্রাণহানি ঘটে কমপক্ষে ১০ জনের এবং আহত হন কয়েকশ মানুষ। ভূমিকম্পের আতঙ্কে স্কুলের শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়েছে—অভিভাবকদের এমনটাই দাবি। অনেকেই জানান, বাচ্চারা একা থাকতে ভয় পাচ্ছে, রাতে ঘুমাতে পারছে না।
মনোবিদরা বলছেন, ধারাবাহিক ভূমিকম্প ও সামাজিক মাধ্যমে আতঙ্কজনক তথ্য দেখে শিশুরা মানসিক চাপে পড়ে যাচ্ছে, যা তাদের ঘুম, খাওয়া এবং পড়াশোনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
হল সংস্কারের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন। গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত প্রভোস্ট কমিটির জরুরি ভার্চুয়াল সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়—
বিকেল ৫টার মধ্যে সবাইকে হল ত্যাগ করতে হবে
মূল্যবান জিনিসপত্র সঙ্গে নিতে হবে এবং কক্ষের চাবি জমা দিতে হবে
সব হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিন পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে
তবে অনেক শিক্ষার্থী হঠাৎ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন। আবাসিক ছাত্রী স্বর্ণা দাশ জানান, “আমার টিউশন আছে। কোথাও থাকার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরছি।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা ২৪ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র অনলাইনে ক্লাস চলবে। আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের আজ সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে লিখিত সম্মতির মাধ্যমে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রথম থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করেছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজও চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করেছে। তবে রাজধানীর অধিকাংশ স্কুল গতকাল স্বাভাবিক নিয়মে ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়েছে।
ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সব পর্ব-মধ্য পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত করে শিক্ষার্থীদের রাত ৯টার মধ্যে আবাসিক হল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি হলে ফাটল দেখা গেছে। জাবির শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নতুন ভবনেই বেশি ফাটল দেখা গেছে, যা ভবন নির্মাণে অনিয়মের ইঙ্গিত দেয়।
ভূমিকম্পজনিত ঝুঁকির কারণে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
শিক্ষার্থীদের ভূমিকম্পের আগে ও পরে করণীয় শেখাতে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সচেতনতা কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
টাঙ্গাইলের এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন,
“ভূমিকম্প যেকোনো সময় হতে পারে। আতঙ্ক নয়, সতর্কতা জরুরি। তাই আপাতত প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের প্রয়োজন নেই।”
ভূমিকম্পের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, হল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষার্থী–অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছে। পাশাপাশি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।