জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের উদ্দেশ্যে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ও অসহযোগ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচির সময় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। সেখানে শুরুতেই উপদেষ্টা সময়ের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে মাত্র তিনজনকে কথা বলার সুযোগ দেন। শেষ পর্যন্ত দুইজন প্রতিনিধি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, তারা এনবিআরের টেকসই ও কার্যকর সংস্কারের পক্ষে। তারা এনবিআরকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে চান, বরং বিভক্তির মাধ্যমে দুর্বল করা নয়।
তারা অভিযোগ করেন, অর্থ উপদেষ্টা বৈঠকের শেষে জানান, অধ্যাদেশ বাতিল নয়, তবে কিছু সংশোধন বা পরামর্শ উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে বিবেচনা করা হতে পারে। তবে, বৈঠকের পর গণমাধ্যমে তিনি সভাকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে মন্তব্য করেন, যা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তাদের সুপারিশগুলো অধ্যাদেশে প্রতিফলিত হয়নি। তারা এনবিআরের ভেতর থেকেই নেতৃত্ব নির্ধারণের পক্ষে মত দেন।
তবে, সভায় উপস্থিত দুই উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অধ্যাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেন, যদিও তার পক্ষে বিস্তারিত যুক্তি দেননি।
সংগঠনটির দাবি, এনবিআরের চেয়ারম্যান আন্দোলনের যৌক্তিকতা ও ব্যাপকতা সঠিকভাবে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছে উপস্থাপন করেননি; বরং প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন, যা বর্তমান সংকট তৈরি করেছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে চারটি প্রধান দাবি উত্থাপন করা হয়:
(১) জারি করা অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে;
(২) এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে;
(৩) রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসম্মুখে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে;
(৪) সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত নিয়ে একটি টেকসই রাজস্ব সংস্কার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
অসহযোগ কর্মসূচি:
বুধবার দুপুর থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে অসহযোগ কর্মসূচি শুরু।
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান।
সারা দেশে এনবিআরের সকল দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি (রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত)।
শনিবার ও রোববার সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি (কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশনে সকাল ৯টা–৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত)।
সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ছাড়া সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
গত ১২ মে সরকার এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করে। আন্দোলনকারীদের দাবি, অংশীজনদের মতামত ছাড়াই গোপনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পর ১৪ মে থেকে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু করে।