কুড়িগ্রাম জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র, জিরো পয়েন্টে রেলওয়ের জমিতে দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় স্থাপিত ছিল। শুরুতে এটি আধাপাকা ভবন থাকলেও পরে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে ভবনটি দ্বিতল পাকা করা হয় এবং দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের অংশ হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এক্সকাভেটর দিয়ে পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে পরিত্যক্ত পড়ে থাকা এই জায়গায় দোকান নির্মাণের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কার্যালয় থাকার ফলে রেললাইন সংলগ্ন রাস্তা সংকুচিত ছিল। শাপলা চত্বর এলাকার বাসিন্দা মো. আবু মুসা বলেন, “আমার বোধশক্তি হওয়ার পর থেকেই দেখি এখানে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস রয়েছে, যা রাস্তার প্রশস্ততা কমিয়ে দিয়েছিল। এখন যেহেতু জায়গাটি খালি হয়েছে, এটি রাস্তার সঙ্গে যুক্ত করে চলাচল সুবিধা বাড়ানো উচিত। কিন্তু প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, বরং জায়গাটি আবারও দখলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।”
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে দোকান নির্মাণ শুরু হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে জায়গাটির অবৈধ ইজারাদার পরিবার।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কার্যালয়ের জমিটি মূলত বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন। তবে শহরের পাওয়ার হাউস পাড়ার বাসিন্দা নছিয়ত উল্লাহ এটি লিজ নিয়ে প্রায় ৫০ বছর ধরে ভোগদখল করছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জায়গাটি আওয়ামী লীগকে ভাড়ায় দেন, যেখানে দলটি দুই তলা ভবন নির্মাণ করেছিল।
সোমবার বিকেলে শাপলা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, নছিয়ত উল্লাহর ছেলে মো. তাজুল ইসলাম ভাঙা ভবনের ইট সরানোর কাজ করাচ্ছেন এবং শ্রমিক দিয়ে জায়গাটি টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, “এই জমি আমার বাবা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছিলেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতারা এটি ভাড়া নিয়ে অফিস গড়ে তোলেন। এখন ভবনটি ভেঙে গেছে, তাই আমরা জায়গাটি ঘিরে রাখছি এবং দোকান নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। লিজের মেয়াদ শেষ হলে সরকারকে জায়গা বুঝিয়ে দেব।”
স্থানীয়রা চান, জায়গাটি পুনরায় দখলে না গিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হোক, তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো দেখা যায়নি।