রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মামলায় আলোচিত মডেল মেঘনা আলমের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান রয়েছে কি না—তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকালে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলামের আদালত এই নির্দেশ দেন।
আদালতে উপস্থিত হয়ে ফেরতের আবেদন
এদিন বেলা ১১টার দিকে নিজের পাসপোর্ট, আইফোন ১৬ প্রো, ম্যাকবুক, অপো মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ ফেরতের আবেদন নিয়ে আদালতে হাজির হন মেঘনা আলম। তার পক্ষে আইনজীবী মহিমা বাঁধন ও মহসিন রেজা শুনানিতে অংশ নেন।
আবেদনে বলা হয়, মেঘনা আলম একজন লিডারশিপ ট্রেইনার ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলনের নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। ফলে ব্যক্তিগত যন্ত্রপাতিগুলো তার পেশাগত কাজে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রয়োজনে এসব ডিভাইসের বৈধ মালিকানা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করা হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. হারুন অর রশিদ আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “এই মামলাটি চাঞ্চল্যকর। আসামি বিভিন্ন বিদেশি কূটনীতিক ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণায় যুক্ত। তার মোবাইল ও ল্যাপটপে থাকা যোগাযোগের তথ্য, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের আলামত ও প্রেমের ফাঁদে ফেলার কৌশল তদন্তের স্বার্থে যাচাই করা জরুরি।”
আদালতে উত্তপ্ত অবস্থান
শুনানির এক পর্যায়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘনা আলম বলেন, “বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার পেশাগত সম্পর্ক রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত ইশা আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলেন। আমার কাছে তার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।”
এসময় বিচারক বলেন, “এটি এখন আলোচ্য বিষয় নয়।”
মেঘনা আরও বলেন, “বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব করে। আমি ছয়টি মহাদেশের দশটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করেছি, নারীর অধিকারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। আমার ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো ফেরত দেওয়া হোক।”
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে পাল্টা মন্তব্য আসে, “এজাহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, আসামি নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে প্রতারণা চালাতেন।” উত্তরে মেঘনা প্রতিবাদ করে বলেন, “আপনি রাষ্ট্রদূতকে অসম্মান করছেন। আমি এখনও নিরপরাধ।”
উভয় পক্ষের উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্কের পর আদালত জব্দকৃত ডিভাইসগুলোতে রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে এবং মালিকানা যাচাই করে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার পটভূমি
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমির ও আরও ২–৩ জন একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন। অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে, সম্মানহানির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতেন তারা।
দেওয়ান সমির ‘কাওয়াই গ্রুপ’-এর সিইও ও ‘সানজানা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি ম্যানপাওয়ার ফার্মের মালিক। আগে ‘মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় তরুণীদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিতেন তিনি। এভাবেই ভুক্তভোগীদের কাছে নারীদের সহজে পৌঁছে দেওয়া হতো। চক্রটি ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করত বলে অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেপ্তার ও জামিনের বিবরণ
এর আগে, ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের জন্য আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সেটি বাতিল হয়। এরপর ১৭ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং ২৮ এপ্রিল আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।