মোহনগঞ্জ হাওর বিলাস ভ্রমন

প্রকাশকালঃ ২৭ আগu ২০২৩ ০১:২০ অপরাহ্ণ ২৩৪ বার পঠিত
মোহনগঞ্জ হাওর বিলাস ভ্রমন

মানুষমাত্রই মুক্ত বিহঙ্গে ঘুরে বেড়াতে চায়। মানুষ এমন এক জাতি তারা বন্দী থাকতে মোটেও পছন্দ করে না। কিন্তু সময় বড় নিষ্ঠুর। একটা সময় সবকিছু থাকতেও, শুধুমাত্র সময়ের অভাবে মনের ভিতর ঘুরে বেড়ানোর শখটাকে গলাটিপে ধরতে হয়। প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়াতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু জগত সংসারে নানা ঝামেলায়, ভ্রমণ শখ পূরণের জন্য সময় আর বের করা যায় না। তাই সময় কারো জীবনে নিষ্ঠুর হবার আগইে, ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়ানো চাই।

হুট করইে এক রাতে সময়কে তুরি মেরে, আমি আর মেহেদি কমলাপুর ট্রেন স্টেশনে গিয়ে উঠি হাওর এক্সপ্রেসে। গন্তব্য ভাটি অঞ্চল মোহনগঞ্জ। বহু বছর পর ট্রেনে চড়লাম। বাদ দিয়েছিলাম যে বছর খুলনা স্টেশন থেকে ঢাকাগামী রাত ৯টার ট্রেন প্রায় ভোর রাতে স্টেশন ত্যাগ করেছিল। 

যাক এবার আর তেমন হয়নি। জাস্ট প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা লেট। হুইসেল বাজিয়ে ঝিকঝিক শব্দ তুলে ট্রেন ছুটেছে তার ঠিকানায়। কেবিন বয় নাশতার কথা জানাল। পেট ভরা, তবুও হ্যাঁ সূচক জবাব দিতেই সার্ভ করতে দেরি হলো না। খেয়েদেয়ে দুজনেই খুব আরামের একটা ঘুম দিয়ে, সকাল ৬টায় মোহনগঞ্জ রেল স্টেশনে নামলাম। বহু বছর পর এদিকটায় এলাম। কালের পরিক্রমায় অনেক কিছুই বদলে গেছে। যে বদলানোর ঢেউ মানুষের চরিত্রের ওপরও আছড়ে পড়েছে। রেল স্টেশনের পাশের হোটেলে তেল ছাড়া মচমচা পরোটা আর ডিম ভাজা দিয়ে সকালের নাশতা সারলাম। আমি আবার ভাটি অঞ্চলে এলে রাস্তার ধারের হোটেলগুলোতে পরোটা না খেলেই নয়। কেন জানি আমার কাছে অন্যরকম স্বাদ লাগে। এবার ফুপা বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোতে চড়লাম। চতুর চালক সম্ভবত ইচ্ছে করেই প্রথমে ভুল জায়গায় নিয়ে অতিরিক্ত কিছু টাকা খসাল।


গাড়ি ঘুরিয়ে এবার গার্লস স্কুলের সামনে এলাম। ফুপাতো ভাই তৌহিদ আগেই অপেক্ষায় ছিল। বিয়ে বাড়ি, অনেক স্বজনের সমাবেশ। কিন্তু আমার মন তো পড়ে আছে হাওরের হিজল-করচ গাছের ছায়াতলে। কোনোমতে সবার সঙ্গে হাই-হ্যালো সেরে ছুটলাম তেঁতুলিয়া। এবার মনে হয় ভাগ্য ভালো। অটো চালককে বেশ ভালোই মনে হলো। গ্রাম্য পথে অটো ছুটে চলে, যেথায় খুশি সেথায় থামি।

মোহনগঞ্জ একটি প্রাচীন জনপদ। ভাটি অঞ্চলের রাজধানী হিসেবেও খ্যাত। চালক রইস আমাদের নানা অনুসন্ধানী প্রশ্নে একজন দক্ষ গাইডের মতোই ব্রিফিং দিচ্ছে। গ্রাম্য পথে চলার সময় বাড়তি আনন্দ যোগায় অচেনা পাখির সুর, পুকুরে দুরন্ত শিশুদের ডিগবাজি আর কৃষাণ-কৃষাণীদের হাসি। চলতে চলতে একটা সময় বুঝে গেলাম, এই অটো চালক লোকটা আসলেই ভালো। নানা আলাপচারিতায় ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তেঁতুলিয়া গ্রামে পৌঁছাই। গ্রামটা খুব সুন্দর। একেবারে ডিঙ্গাপোতা হাওরের তীরেই।


গ্রামের মানুষগুলোর সঙ্গে পরিচিত হই। এটা-সেটা দোকানদার হতে কিনে খাই। বলা যায়, এটা আমাদের ‘দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ’র বিশেষ হবি। ঘাটে গিয়ে ট্রলারে চড়ি। বিশাল হাওরের বুকে ভেসে বেড়াই। চারদিকে থৈথৈ নতুন পানি।

ভটভট শব্দ তুলে ট্রলার ডিঙ্গাপোতা হাওরে ভেসে বেড়ায়। দূরের এক হিজল গাছের ছায়ায় যাই। চারদিকে অথৈ পানি। মাঝে গাছটি শির উঁচু করে জেগে রয়েছে। এক অন্যরকম ভালো লাগার মুহূর্ত। তাছাড়া বর্ষাতে হাওরের সৌন্দর্য এমনিতেই বেড়ে যায়। গাছের ডালের সঙ্গে লাগা পানির ছলাত্ ছলাত্ শব্দ। ট্রলার ছেড়ে গাছের চড়ি। পা ভিজাতেই সারাদেহে অদ্ভুদ শিহরণ। আকাশে ভেসে বেড়ায় চিল। নয়া পানিতে মাছের লুকোচুরি। মত্স্য শিকারীরা ব্যস্ত। আমরা খুঁজি জীবনের সুখ। সেই সুখের খুঁজে উকিল মেহেদি গাছের ডালে ঝুলতে গিয়ে ধপাস করে পানিতে! সে হয়ত জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছে। শেষে আরো কি-না কী খুঁজবে কে জানে! তাই আর দেরি নয়। মাঝি আবারো ট্রলার ভাসাল।

রইস জানাল, শুকনো মৌসুমে এ ডিঙ্গাপোতা হাওরের বুকে বিভিন্ন জাতের ধান চাষাবাদ হয়। যা দেশের খাদ্যভাণ্ডারের চাহিদা মিটাতে বেশ সহায়ক হয়। এই মোহনগঞ্জের হাওরগুলো হতে প্রচুর মিঠাপানির মাছ আহরণ করা হয়ে থাকে। ডিঙ্গাপোতা হাওর হয়ে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর পর্যন্ত যাওয়া যায়। যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নতুন কিছু দেখার শখ মিটাবে। নীল আসমানের তলায় মৃদু বাতাসে, হাওর জলে ভাসতে ভাসতে বেলা গড়িয়ে প্রায় মধ্য দুপুর। দিনটি ছিল জুমাবার। নিতে হবে নামাজের প্রস্তুতি। যাই এবার তীরে।


যাবেন যেভাবে
বাস ও ট্রেন— দুভাবেই যাওয়া যায়। সবচেয়ে  আরামদায়ক হবে রাতের বাস বা ট্রেনে গেলে। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর হতে দিনে-রাতে বাস, ট্রেন মোহনগঞ্জর উদ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। মোহনগঞ্জ রেল স্টেশন হতে অটোতে তেঁতুলিয়া নৌঘাট।

খরচপাতি
জনপ্রতি দুই রাত একদিনে মাত্র ২ হাজার টাকা হলেই হবে। অবশ্য এটা নির্ভর করবে আপনার বিলাসিতার ওপর।

ভ্রমণ তথ্য
রাতের বাস/ট্রেনে গেলে, সারাদিন ঘুরে আবার রাতেই ঢাকা ফেরা যাবে।