রোজার পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চার নিত্যপণ্যের শুল্কহার কমিয়েছিল সরকার। গত বুধবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরপর ছাড়কৃত নতুন শুল্কহারে তেল, চিনি ও খেজুরের চালান খালাস শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নতুন করে এসব পণ্যের যে শুল্কায়ন করছে তাতে দেখা যায়, প্রতি কেজি চিনিতে শুল্ক কমেছে ৬৮ পয়সা। সয়াবিন তেলে প্রতি কেজিতে কমেছে ৫ থেকে ৬ টাকা। পাম তেলে কমেছে ৪ টাকা ৭৯ পয়সা। সবচেয়ে ভালো মানের খেজুরে শুল্ক কমেছে কেজিতে ৫৪ টাকা। আর নতুন শুল্কহারে চালের কোনো চালান গতকাল পর্যন্ত খালাস হয়নি।
গত বুধবার এনবিআরের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয় এক হাজার টাকা, আগে যা ছিল দেড় হাজার টাকা। পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। খেজুরে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সেদ্ধ ও আতপ চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার নাহিদুন্নবী গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে নতুন শুল্কহার কার্যকর হয়েছে। নতুন শুল্কহারে প্রতিদিনই পণ্যের চালান খালাস হচ্ছে।
কোন চালানে কত কমল
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, নতুন শুল্কহার নির্ধারণের পর গত রোববার অপরিশোধিত চিনির একটি চালান খালাস করেছে দেশবন্ধু সুগার মিলস। চালানটি আমদানি হয়েছে প্রতি টন ৬৬৪ মার্কিন ডলারে। তাতে প্রতিষ্ঠানটি প্রতি কেজি চিনিতে শুল্ক-কর দিয়েছে ৩৯ টাকা ১৮ পয়সা। একই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি একই দরে চিনি আমদানি করে প্রতি কেজিতে শুল্ক-কর দিয়েছিল ৩৯ টাকা ৮৬ পয়সা। সেই হিসাবে সরকারের শুল্কছাড়ের ঘোষণার পর প্রতি কেজি চিনিতে শুল্ক-কর কমেছে ৬৮ পয়সা।
এ ছাড়া শুল্ক-কর কমানোর পর বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস ১০ হাজার টন এবং বাংলাদেশ এডিবল অয়েল দুই হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস করেছে। তাতে চালানভেদে সয়াবিন তেল আমদানিতে প্রতি কেজিতে শুল্ক-কর কমেছে ৫ থেকে ৬ টাকা। সয়াবিন তেল বাজারে লিটারে বিক্রি হলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কায়ন করে কেজির হিসাবে।
নতুন শুল্কহারে ২৪টি চালানে ৬০ হাজার টন অপরিশোধিত পাম তেল বাজারজাতের জন্য খালাস হয়েছে। তাতে প্রতি টনে ৮৫০ ডলারে শুল্কায়ন হওয়া পাম তেল আমদানিতে আগে কেজিতে শুল্ক-কর ছিল ১৪ টাকা ২৮ পয়সা। নতুন শুল্কহারে এখন আমদানিকারকেরা পরিশোধ করছেন কেজিতে ৯ টাকা ৩৫ পয়সা। এ হিসাবে প্রতি কেজিতে শুল্ক কমেছে ৪ টাকা ৭৯ পয়সা।
পাম তেল ও সয়াবিন তেলে উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগে উৎপাদন পর্যায়ে কারখানাভেদে দেড় থেকে আড়াই টাকা ভ্যাট দিতেন উদ্যোক্তারা। এখন তা দিতে হচ্ছে না। ফলে সব মিলিয়ে পাম ও সয়াবিন তেল কেজিতে শুল্ক কমেছে ৭ থেকে ৮ টাকা।
৭ ফেব্রুয়ারির পর ঢাকা কাস্টমস হাউসের মাধ্যমে খেজুরের চারটি চালান খালাস হয়েছে। এসব চালানে ছিল উন্নত মানের খেজুর। এর মধ্যে রয়েছে আজওয়া, মরিয়াম, মেডজুল ও মাবরুর। এ ধরনের খেজুর আমদানিতে আগে কেজিতে শুল্ক-কর ছিল ২৬৩ টাকা। শুল্ক কমানোর পর খালাস হওয়া চালানে আমদানিকারকেরা কেজিতে শুল্ক পরিশোধ করেছেন ২০৯ টাকা। তাতে শুল্ক-কর কমেছে কেজিতে ৫৪ টাকা।
খেজুরের ক্ষেত্রে কাস্টমস নির্ধারিত নির্দিষ্ট শুল্কায়ন মূল্য রয়েছে। এ কারণে খেজুরে শুল্ক যা কমানো হয়েছে, তা সবক্ষেত্রে একই থাকবে। শুল্কায়ন মূল্যের ভিত্তিতে সাধারণ মানের খেজুর আমদানিতে শুল্ককর কমবে কেজিতে ৩৩ টাকা, যদিও এখন পর্যন্ত সাধারণ মানের খেজুরের কোনো চালান খালাস হয়নি।
নতুন শুল্কহারে চালান খালাস শুরু হলেও বাজারে এসব পণ্যের দামে এখনো খুব একটা প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক কমার প্রভাব বাজারে পড়বে ধীরে ধীরে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আরএম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সাহেদ উল আলম প্রথম আলোকে বলেন, শুল্ক কমলেও চিনির দামে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। তবে সয়াবিন তেলের দাম পাইকারিতে কিছুটা কমেছে। খালাস হওয়া চালান কারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত শুরু হলে আরও কিছুটা দাম কমতে পারে।