প্রকাশকালঃ
২৬ জুলাই ২০২৩ ১২:২৩ অপরাহ্ণ ১৯৭ বার পঠিত
বিপদাপদ মানুষের জীবনের অংশ। এটি কখনো কখনো মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, আবার কারো ক্ষেত্রে অকল্যাণও হয়। যারা মুমিন তাদের ওপরও মাঝে মাঝে বিপদ আসে। যারা কাফের, তাদের ওপরও বিপদ আসে।
তবে মুমিন যদি বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে পারে, তবে তার জন্য উত্তম প্রতিদানের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মানুষ মানবীয় দুর্বলতার কারণে কখনো কখনো হতাশ হয়ে বলে বসে, আমি তো সাধ্যমতো মহান আল্লাহর ইবাদত করার চেষ্টা করি, তাহলে আমার ওপর কেন এত পরীক্ষা আসে! নিম্নে এর সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো—
পরীক্ষাস্বরূপ
মহান আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাদের কখনো কখনো পরীক্ষা করেন, পরীক্ষা করার জন্যই তাদের বিভিন্ন রকম বিপদে পতিত করেন। তারপর তাদের ঈমানের অবস্থা যাচাই করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি।
ফলে আল্লাহ জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে আর এও জেনে নেবেন কারা মিথ্যা বলে।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২-৩) যারা বিপদে ধৈর্য ধারণ করে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে, তাদের পুরস্কারের কথাও পবিত্র কোরআনে রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।
যারা, তাদের যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)
গুনাহ মাফ করার জন্য
মহান আল্লাহ কখনো কখনো বান্দাকে পাপমুক্ত করার জন্য বিপদাপদ দেন। সোনাকে যেমন আগুণে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত করা হয়, তেমনি আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদেরও বিভিন্ন রকম বিপদ দেন, এর মাধ্যমে তিনি তাদের পাপমুক্ত করেন। যার ঈমান যত মজবুত, তার ওপর বিপদও তত বড় আসে।
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, মুসআব ইবনে সাদ (রহ.) থেকে তার বাবার সূত্রে থেকে বর্ণিত, তিনি (সাদ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! মানুষের মাঝে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বলেন, নবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বিনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে তাহলে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব, বান্দার ওপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে সে জমিনে চলাফেরা করে অথচ তার কোনো গুনাহই থাকে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৮)
মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য : মহান আল্লাহ কখনো কখনো তাঁর মুমিন বান্দাদের বিপদাপদ দেন তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আমি শুনেছি, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো মুসলমানের গায়ে একটি কাঁটা বিদ্ধ হয় কিংবা তার চেয়েও বেশি ছোট্ট কোনো আঘাত লাগে, তার বিনিময়ে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৫৫)
অতএব মুমিনের উচিত, যেকোনো পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা। ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর কাছে এর উত্তম প্রতিদানের জন্য দোয়া করা। ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ বিপদকে নিয়ামতে পরিণত করে দেবেন।