পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রশাসন। শুক্রবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে নিয়ন্ত্রণ বুঝিয়ে দেয়। এর মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হলো আদালতের ক্রোক আদেশ। এদিকে রিসোর্ট থেকে মাছ চুরির দায়ে রিসোর্টের মৎস্য কর্মকর্তাকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।
জানা গেছে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১১৯টি দলিলে উল্লিখিত সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৬ জুন এসব সম্পত্তি দেখভালের জন্য তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের আদেশ দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বেনজীরের মালিকানাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক এবং সাভানা অ্যাগ্রো ফার্মের জন্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা কৃষি কর্মকর্তা ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয় দুদক। নিয়োগের বিষয়টি রাত ১২টার দিকে মাইকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার মিজ বাবলী শবনম।
গোপালগঞ্জে ৬৪টি দলিলের ৬২১ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশে থাকলেও বেনজীরের দলিল ছাড়া দখলকৃত কয়েকশ বিঘা জমিও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রশাসন। তবে দুদক ও প্রশাসন বলছে তদন্ত শেষে দলিল ছাড়া দখলকৃত জমির প্রকৃত মালিকদের তাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এদিকে গতরাতে মাছ চুরির দায়ে রিসোর্টে মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামকে আটকের পর মামলা দায়ের করেছে দুদক। এ সময় ৫৬২ কেজি মাছ জব্দ করে দুদক ও প্রশাসন। পরে জব্দকৃত মাছ নিলামে বিক্রি করা হয়।স্থানীয়দের অভিযোগ ক্রোক আদেশের পর থেকেই রাতের আধারে রিসোর্ট ও ফার্ম থেকে গরু, মাছসহ মূল্যবান মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে দুদক বলছে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জের দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান জানান, আজ শনিবার সকাল থেকে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুত এবং সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে আয়-ব্যয়সহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় পার্কের সকল কার্যক্রম চালু থাকবে এবং তখন দর্শনার্থী প্রবেশে আর কোনো বাধা থাকবে না। তবে রিসোর্টের দায়িত্ব থাকবে জেলা প্রশাসকের কাছে আর রিসোর্টের মৎস্য ঘেরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে এবং অ্যাগ্রোফার্ম ও আবাদি কৃষি জমির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা কৃষি কর্মকর্তাকে।
এদিকে শনিবার দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, দলিলকৃত জমির পাশাপাশি বেনজীরের দলিল ছাড়া দখলকৃত জমিও আমাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে তদন্ত শেষে দলিল ছাড়া দখলকৃত জমি প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ছাড়া আমরা এখনই দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দিচ্ছি না। আমরা সব কিছু বুঝে নেওয়ার পর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেব।