কি সেই রহস্যময় ৫ টি স্থান , যার ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি বিজ্ঞানীরাও !

প্রকাশকালঃ ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:২৮ অপরাহ্ণ ৩৪৮ বার পঠিত
কি সেই রহস্যময় ৫ টি স্থান , যার ব্যাখ্যা  খুঁজে পায়নি বিজ্ঞানীরাও !

বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় ৫ টি স্থান, যা পৃথিবীতে এখনোও অমীমাংসিত রয়েছে 
বহুকাল ধরেই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিভিন্ন সৃষ্টি, বায়ুমন্ডল, প্রকৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে গবেষনা করছে। যুগে যুগে গবেষনায় উঠে এসেছে পৃথিবীর বহু রহস্যময় স্থানের তথ্য। প্রকৃতির নানান রহস্যমন্ডিত স্থান পৃথিবীর প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজে পায়নি বিজ্ঞানীরাও। আজকের আলোচনায় আমরা জানবো বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় ৫ টি স্থান সম্পর্কে, যা চমকে দেবে আপনাকেও। 
(১) বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল (Bermuda Triangle), আটলান্টিক মহাসাগর

ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল বা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলোর মধ্যে একটি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে, ফ্লোরিডা এবং পুয়ের্তো রিকোর মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। ভৌতিক ও রহস্যময় এই স্থানটির সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব হয়নি আজও।

‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন ভিনসেন্ট গ্যাডিস ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত আর্গোসি ম্যাগাজিনে। হারিয়ে যাওয়া সীপ্লেন, জাহাজ, বিধ্বস্ত বিমানের গল্প প্রচলিত রয়েছে এই স্থানটিকে ঘীরে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এর পরিধি প্রায় ১.৫ মিলিয়ন বর্গমাইলেরও বেশি বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। তাই খুব সহজেই বহু জাহাজ এর খপ্পরে পড়ে যায়।

গবেষকদের মতে, এই স্থানে চৌম্বকীয় অসামঞ্জস্য রয়েছে, যা কম্পাসের দিক নির্ধারণ ক্ষমতা হ্রাস করে। অনেকেই বলেন, এখানে থাকা গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের কথা। এর দক্ষিনে তুর্কস ও কাইকোসের সূর্য-ভাঙা দ্বীপ এবং উত্তরে বারমুডার গুহাগুলো রয়েছে। জানা যায়, আজ পর্যন্ত কোন জাহাজ, বিমান ইত্যাদি কোন যানবাহন এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের উপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারেনি। গবেষনার জন্য যাওয়াও বিপজ্জনক এই রহস্যময় স্থানটিতে।

(২) ইষ্টার দ্বীপ (Easter Island)

ইষ্টার দ্বীপ তাহিতির সমুদ্র তীর হতে ২০০০ মাইল দূরে অবস্থিত। এর আরেক নাম ‘রাপা নুই’ (Rapa Nui)। এই দ্বীপে বসবাসকারী আদিবাসীদের নাম ‘পলিনেশিয়ান’। আদিবাসীরা এই দ্বীপে এসেছিলো প্রায় ৪০০-৬০০ খ্রীষ্টপূর্বে। রহস্যময় এই দ্বীপের মূল আকর্ষন হলো এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মূর্তি। এসকল মূর্তিগুলোর নামকরন করা হয়েছে ‘মুয়াই’ (Moai)।

গবেষনা অনুযায়ী, এখানে প্রায় ১০০০ এর মতো মুয়াই রয়েছে। তার মধ্যে খুঁজ পাওয়া ৮৮৭ টি মোয়াইয়ের প্রতিটির চেহারা ভিন্ন। ৮৮৭ টি মুয়াইয়ের মধ্যে ৩৯৪টি মুয়াই সম্পূর্নভাবে তৈরি করা হয়নি। এদের দেহের সম্পূর্ণ অংশই মাটির নিচে রয়েছে। শুধুমাত্র মাথা এবং বুকের উপরিভাগই স্পষ্টত দেখা যায়। এখানে থাকা সবচেয়ে বড় মুয়াইয়ের উচ্চতা প্রায় ৩৩ ফুট এবং এর ওজন আনুমানিক ৮২ টন। 

(৩) সুইসাইড ফরেস্ট (Suicide Forest) আওকিগাহারা, জাপান

জাপানের মাউন্ট ফুজির নিম্নদেশে অবস্থিত আওকিগাহারার এই বনটি বিশ্বজুড়ে ‘সুইসাইড ফরেস্ট’ নামে পরিচিত। প্রতি বছর এই বনে শত শত মানুষ আত্মহত্যা করতে যায়। এখান থেকে বছরে কতগুলো লাশ উদ্ধার করা হয়, তা প্রকাশ করা হয়না। কেন মানুষ এখানে এসে আত্মহত্যা করে তা আজও রহস্যময় হয়েই রয়েছে।

প্রাচীন এক কিংবদন্তি অনুসারে, কোন এক সময়, স্থানীয় এলাকায় যখন সকল মানুষের চাহিদা, ধারনক্ষমতা বজায় রাখতে সক্ষম ছিলোনা, তখন আওকিগাহারার এই জঙ্গলে বহু মানুষকে ফেলে রাখা হয়েছিল। সেখানে তারা সবাই অনাহারে মারা গিয়েছিল। সেই মৃতদের আত্না প্রতিদিন একটি নতুন আত্মার সন্ধান করে। যদিও এটি কাল্পনিক বিষয়, তবে জাপানি জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করেন যে, এই বনে আত্মহত্যার পিছনে রয়েছে গাছের উপর বসবাসকারী অদ্ভুত শক্তি। যারা একবার এই বনে প্রবেশ করে, তাদেরকে সেই শক্তিগুলো বেরিয়ে আসতে দেয় না এবং তারা আত্মহত্যা করে।

(৪) ম্যাগনেটিক হিল (Magnetic Hil), ভারত

ভারতের লেহ শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি ছোট প্রসারিত রাস্তা মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধী ব্যবস্থার কারণে এটি অস্বাভাবিক। এটি চৌম্বক পাহাড়, মিস্ট্রি হিল, গ্র্যাভিটি হিল ইত্যাদি নামেও পরিচিত। প্রতিবছর এখানে হাজারো পর্যটক আসে।

রহস্যময় এই স্থানটি নিয়ে সবচেয়ে সাধারন তত্ত্ব হলো, এখানে একটি শক্তিশালী চৌম্বকীয় শক্তি কাজ করে। এর ফলেই পাহাড়ের ঢালের নিচে থাকা গাড়িগুলো উল্টা দিকে উপড়ে উঠতে থাকে। এই অঞ্চলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানগুলোও চৌম্বকীয় প্রতিরোধকে বাইপাস করার জন্য তাদের উচ্চতা বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতির এই রহস্যের সঠিক ব্যাখ্যা আজও কেউ দিতে পারেনি। 

(৫) নরকের দরজা (Door To Hell), তুর্কমেনিস্তান

বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলোর মধ্যে তুর্কমেনিস্তানের নরকের দরজা অন্যতম। জ্বলন্ত এই খাদটি প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে খুলেছিল এবং তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত জ্বলতে থাকে। এটি রাতের বেলায় একটি সুদৃশ্য রূপ ধারন করে এবং বহুদূর থেকেই এর আভা পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়।

ধারনা করা হয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি প্রাকৃতিক গ্যাস ড্রিলিং অভিযান থেকে এটি উদ্ভূত হয়েছে। এই গর্তের রহস্য উন্মোচন করতে একটি গ্যাস ক্রেটার সেখানে গিয়েছিল। তারপর ‘জর্জ কাউরুনিস’ নামে একজন ব্যক্তি সর্বপ্রথম সেই গর্তের ১০০ ফুট গভীর পর্যন্ত গিয়েছিলেন। নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, তিনি অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে এসেছিলেন, তবে তেমন কোন তথ্য পাননি।