ভারতে ২০০০ রুপির নোট কেন ছাড়া হলো, কেনই–বা তুলে নেওয়া হচ্ছে

প্রকাশকালঃ ২২ মে ২০২৩ ০৫:১৪ অপরাহ্ণ ৭২ বার পঠিত
ভারতে ২০০০ রুপির নোট কেন ছাড়া হলো, কেনই–বা তুলে নেওয়া হচ্ছে

০১৬ সালে ৫০০ ও ১০০০ রুপির ব্যাংক নোট বাতিলের পর ভারতে ২০০০ রুপির নোট বাজারে ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার হঠাৎ করে সেই ২০০০ রুপির নোট বাতিল করা হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) বলেছে, প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে তা করা হয়েছে। এটা মুদ্রা ব্যবস্থাপনারই অংশ।

ভারতের এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, ২০০০ রুপির নোট ছাপানো বন্ধ হয়েছে আরও আগে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, অন্যান্য মানের ব্যাংক নোট বাজারে পর্যাপ্ত থাকার কারণে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকেই এই ব্যাংক নোট ছাপানো বন্ধ করা হয়েছে। এবার তা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে।

আরবিআইয়ের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেছেন, বাজারে প্রচলিত ২০০০ রুপির অধিকাংশ নোট ফেরত আসবে বলে তিনি আশা করছেন। মানুষের অত তাড়াহুড়া করারও কিছু নেই, কারণ চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের পর কী করা হবে, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে তিনি জানিয়েছেন, ৩০ সেপ্টেম্বরের পর ২০০০ রুপির নোট অবৈধ হয়ে যাবে না। এ ছাড়া যাঁরা বিদেশে আছেন, তাঁদের প্রতি আরবিআই সংবেদনশীল আচরণ করবে বলে জানিয়েছেন শক্তিকান্ত দাস।

কত নোট আছে বাজারে
দুই হাজার রুপির অধিকাংশ নোট ২০১৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই বাজারে ছাড়া হয়, এ-জাতীয় মোট নোটের ৮৯ শতাংশ। আরবিআই বলেছে, সেই হিসাবে এসব নোটের আনুমানিক জীবৎকাল, অর্থাৎ চার থেকে পাঁচ বছর শেষ হয়ে গেছে। তারা আরও বলেছে, ২০০০ রুপির নোট সাধারণ লেনদেনে বেশি ব্যবহৃত হয় না।

অন্যান্য মানের নোট বাজারে ছাড়ার কারণে মূল্যমানের সাপেক্ষে ২০০০ রুপির নোটের হিস্যা কমে এসেছে বলে জানিয়েছে আরবিআই। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বাজারে প্রচলিত ২০০০ রুপির নোটের হিস্যা ছিল প্রচলিত মোট নোটের মূল্যমানের ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এটাই ছিল তার সর্বোচ্চ হিস্যা। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তা নেমে এসেছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশে।

নোটের সংখ্যার হিসাব কষে আরবিআই জানিয়েছে, ২০২০ সালের ভারতের বাজারে ২৭৪ কোটি সংখ্যক ২০০০ রুপির নোট ছিল, বাজারে প্রচলিত মোট নোটের মধ্যে যা ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০২১ সালে যা নেমে আসে ২৪৫ কোটিতে। ২০২২ সালে তা আরও কমে ২১৪ কোটিতে নেমে আসে।

অন্যান্য মানের পর্যাপ্ত ব্যাংক নোট বাজারে আছে বলে জানিয়েছে আরবিআই।

ক্লিন নোট পলিসি
এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, আরবিআইয়ের ক্লিন নোট পলিসির অধীনে ২০০০ রুপির নোট প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে গৃহীত এই নীতির কথা হলো, বাজারে প্রচলিত ময়লা নোট তুলে নিয়ে ভালো মানের নোট বাজারে ছাড়া। আরবিআই তখন ব্যাংকগুলোকে কেবল ভালো মানের নোট বাজারে ছাড়ার পরামর্শ দেয়; একই সঙ্গে, পুরোনো ও ছেঁড়াফাড়া নোট পুনর্ব্যবহার উপযোগী করা থেকে বিরত থাকারও পরামর্শ দেয়।

সেই সঙ্গে ব্যাংক নোটের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে স্ট্যাপল করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয় আরবিআই।


কীভাবে বিনিময় হবে
ভারতের বৃহত্তম সরকারি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক ইন্ডিয়া গতকাল পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, ২০০০ রুপির নোট বিনিময়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ফরম বা স্লিপ পূরণের প্রয়োজন হবে না। দিনে ২০ হাজার রুপি পর্যন্ত এমন নোট বদলে নেওয়া যাবে। একবারেই তা করতে হবে তা-ও নয়। কেউ চাইলে লাইনে দাঁড়িয়ে একবার নোট বদলের পর সঙ্গে সঙ্গে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে নোট বদল করতে পারেন।

এ ছাড়া ২০ হাজার রুপির সীমা দেওয়া হয়েছে এই প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য, যাতে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত না হয়। এ ছাড়া যে ব্যাংক থেকে মানুষ নোট বদল করবেন, তাঁদের সেই ব্যাংকের গ্রাহক হতে হবে, এমন কথা নেই বলেও জানানো হয়েছে।

তবে ৩০ সেপ্টেম্বরের পর ২০০০ রুপির যেসব নোট বাজারে থাকবে, সেগুলো অবৈধ হবে না—এ কথা বলার পর আবার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে শক্তিকান্ত দাস বলেন, সময়সীমা বেঁধে দেওয়া না হলে মানুষ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিত না।

এদিকে ভারতের সাবেক প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রামানিয়াম এক টুইটে বলেছেন, সময়সীমার বিষয়ে আরবিআইয়ের স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকা উচিত।  

আরবিআই নির্দেশনা
আরবিআই পরিষ্কারভাবেই জানিয়েছে, ২০০০ রুপির নোট বিনিময় করতে মানুষকে মাশুল গুনতে হবে না। এ ছাড়া বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী নাগরিকেরা যেন নোট বদল করতে এসে হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

আজ নতুন এক পরিপত্রে আরবিআই ব্যাংকগুলো অভিন্ন ও সরল ফরম্যাটে এই নোট বিনিময়ের তথ্য সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে। এ ছাড়া মানুষকে যেন রোদে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে না হয়, সে জন্য ছাউনি ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে আরবিআই।