মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ বন্টনের প্রচলিত ভুল ত্রুটি

প্রকাশকালঃ ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:০৯ অপরাহ্ণ ৪৬১ বার পঠিত
মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ বন্টনের প্রচলিত ভুল ত্রুটি

মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টনের শাখাগত প্রায় সব খুঁটিনাটি বিধান মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বর্ণনা করেছেন। আত্মীয়ের নাম নিয়ে বলে দিয়েছেন কে কতটুকু পাবে। মৃতের সম্পদ বণ্টনের নিয়ম বর্ণনার পর মহান আল্লাহ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘এটা (মৃতের সম্পদ বণ্টনের এ নীতিমালা) আল্লাহর সীমানা। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে (আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মৃতের সম্পদ বণ্টন করবে) তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদ-নদী প্রবাহিত।


সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তা মহাসফলতা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবে এবং আল্লাহর সীমানা লঙ্ঘন করবে (মৃতের সম্পদ আল্লাহর আইনমতো বণ্টন করবে না) আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সে তাতে চিরকাল থাকবে। তা লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১-১৩)


উত্তরাধিকার সম্পদ সঠিকভাবে বণ্টন না করে আত্মসাৎ করা হলে এবং দুনিয়াতে এর কোনো বিহিত না করলে আখিরাতে নেকি দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,  ‘তোমরা কি জানো, নিঃস্ব কে? সবাই বলল, আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ওই ব্যক্তি, যার কোনো টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ নেই। তখন তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে নিঃস্ব ওই ব্যক্তি, যে দুনিয়া থেকে সালাত-সিয়াম-জাকাত ইত্যাদি আদায় করে আসবে।


সঙ্গে ওই সব লোকেরাও আসবে, যাদের কাউকে সে গালি দিয়েছে, কারো ওপর অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ গ্রাস করেছে, কাউকে হত্যা করেছে বা কাউকে প্রহার করেছে। তখন ওই সব পাওনাদারকে ওই ব্যক্তির নেকি থেকে পরিশোধ করা হবে। এভাবে পরিশোধ করতে করতে যদি তার নেকি শেষ হয়ে যায়, তখন ওই সব লোকের পাপগুলো এই ব্যক্তির ওপর চাপানো হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮১)


অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামত দিবসে সাত স্তবক জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি : ৩০২৬)

 

মৃতের সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ভুলত্রুটি

আমাদের সমাজে মৃতের সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে কিছু ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, যেগুলো ইসলামে নিষিদ্ধ। ভুলগুলো হলো—

 

১. বোনকে জমির অংশ না দেওয়া। নামে কিছু দিলেও কিনে রাখা হয়, আবার সঠিক বাজারমূল্যও দেওয়া হয় না। নামমাত্র পরিমাণে অনেক অনেক কম মূল্য দেওয়া হয়।

২. বোন পিতার ওয়ারিশ দাবি করলে খারাপ চোখে দেখা হয়। তাদের মন্দ ভাবা হয়। অথচ এটা তাদের হক। আল্লাহপ্রদত্ত পাওনা। নিজের পাওনা দাবি করা কি কোনো অন্যায়? 

৩. বোন ওয়ারিশ দাবি করলে তাদের ওয়ারিশ দিয়ে দিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক চ্ছিন্ন করা হয়। অথচ ওয়ারিশ দিয়ে দেওয়া ফরজ আবার সম্পর্ক রক্ষা করাও ফরজ। ওয়ারিশ দেওয়ার পরেও বোনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতেই হবে।

৪. স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী যদি অন্যত্র বিবাহ বসে তবে তাকে তার মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ দেওয়া হয় না। মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ পাওয়ার জন্য তো মহান আল্লাহ অন্যত্র বিয়ে না করার শর্ত জুড়ে দেননি। তাই অন্যত্র বিবাহ বসলেও সে তার পূর্বের মৃত স্বামীর সম্পদের ভাগ পুরোপুরিই পাবে।

৫. অনেক সময় স্থাবর সম্পদ ভাগ করা হলেও অস্থাবর সম্পদ ভাগ করা হয় না। স্থাবর সম্পদের মতো অস্থাবর সম্পদও ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী ভাগ হবে। যে বস্তু ভাগ করা যায় না বা ভাগ করলে তা ব্যবহার উপযোগী থাকে না সেই বস্তু ওয়ারিশদের ভেতরে বা বাইরে বিক্রি করে যে পরিমাণ মূল্যই পাওয়া যাবে তা-ই ভাগ করতে হবে।

৬. মৃতের ব্যবহারের জিনিসপত্র ভাগ না করে কাউকে দান করা হয় বা স্মৃতি/বরকত হিসেবে কেউ রেখে দেয়। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বরং সব সম্পত্তি ভাগ করতে হবে।

৭. ওয়ারিশদারের মধ্যে শিশু থাকলে তার ভাগ আলাদা করা হয় না। বড়রা নিজের মতো করে ভোগ করতে থাকে।

৮. মেয়েকে ঠকানোর জন্য পিতা ছেলেদের নামে সম্পদ লিখে দেন। এসব পদ্ধতি ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।