যে কান্নায় জাহান্নামের আগুন নিভে

প্রকাশকালঃ ১৩ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ ৪২৪ বার পঠিত
যে কান্নায় জাহান্নামের আগুন নিভে

প্রতিটি মুমিনের একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি, পরকালীন মুক্তি। কারণ জাহান্নামের আগুন অত্যন্ত ভয়াবহ। দুনিয়ার আগুনের চেয়ে বহু গুণ শক্তিশালী, আগ্রাসী। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের এই আগুন থেকে বাঁচার সূত্র বাতলে দিয়েছেন। নবীজি (সা.)-ও তাঁর উম্মতদের সেই আগুনের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং তা থেকে বাঁচার বিভিন্ন ফর্মুলা শিখিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো, মহান আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে পর্যন্ত না দুধ স্তনে পুনঃপ্রবেশ করবে। আর আল্লাহর রাস্তায় ধুলা এবং জাহান্নামের আগুনের ধোঁয়া একত্র হবে না।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩১০৮)

মুমিন কোমল হবে, আল্লাহর স্মরণে তার মন বিগলিত হবে, এটাই আল্লাহর চাওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘যারা ঈমান এনেছে তাদের জন্য সে সময় কি এখনো আসেনি যে আল্লাহর স্মরণে আর যে প্রকৃত সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের অন্তর বিগলিত হয়ে যাবে? আর তারা যেন সেই লোকদের মতো না হয়ে যায়, যাদের পূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, অতঃপর তাদের ওপর অতিবাহিত হয়ে গেল বহু বহু যুগ আর তাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়ল। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ১৬)


আল্লাহর স্মরণে মুমিনের অশ্রু এতটাই শক্তিশালী যে তা জাহান্নামে ভয়াবহ আগুনকে নিভিয়ে দিতে সক্ষম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং আল্লাহ তাআলার রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে ঘুমবিহীনভাবে রাত পার করে দেয়।’  (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৯)

অর্থাৎ তারা জাহান্নামে যাবে না।

এ জন্য মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দারা তাঁর স্মরণে ক্রন্দন করে। বিশেষ করে তাঁর কালামের তিলাওয়াত তাদের হৃদয়কে বিগলিত করে। তাদের চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘আর কোরআন আমি নাজিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাজিল করেছি পর্যায়ক্রমে।  বলো, ‘তোমরা এতে ঈমান আন বা ঈমান না আন, নিশ্চয়ই এর আগে যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের কাছে যখন এটা পাঠ করা হয় তখন তারা সিজদাবনত হয়ে লুটিয়ে পড়ে। আর তারা বলে, ‘আমাদের রব মহান, পবিত্র; আমাদের রবের ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে। আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০৬-১০৯)


এর বাস্তব চিত্র সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে পাওয়া যায়। উবাইদ ইবনে উমাইর (রহ.) বলেন, একদিন আমাদের সঙ্গে উমর (রা.) নামাজ পড়ছিলেন, যখন তিনি সুরা ইউসুফের ৮৪ নম্বর আয়াত ‘...বলল, ইউসুফের জন্য আফসোস আর দুঃখে তার চক্ষুদ্বয় সাদা হয়ে গিয়েছিল’ তিলাওয়াত করেন, তখন তিনি কাঁদতে শুরু করেন। এবং রুকুতে চলে যান। (ফাজায়েলুল কোরআন লি আবি উবাইদ)

আবু দোহা (রহ.) বলেন, আমি শুনেছি যে একবার আয়েশা (রা.) সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে ‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে...’ তিলাওয়াত করে এমন কেঁদেছিলেন যে তাঁর ওড়না ভিজে গিয়েছিল। (আয-যুহদ; আহমদ ইবনে হাম্বল, পৃ: ৯১১)।

তাই আমাদের উচিত, পবিত্র রমজান মাসের রাতগুলোতে মহান রবের ইবাদতে মগ্ন থাকার চেষ্টা করা। অশ্রুসিক্ত চোখে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।