মানুষের পার্থিব জীবন পরকালীন জীবনের পাথেয় অর্জনের জন্য। পুণ্যের কাজের মাধ্যমে মানুষ তা অর্জন করে থাকে। এ জন্য ইসলাম বেশি বেশি নেক আমল করতে বলেছে এবং পুণ্যের কাজে বিলম্ব করতে নিষেধ করেছে; বরং পুণ্যের কাজের সুযোগ তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে, যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের মতো, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)
আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেন, মুমিন নিষ্ঠাপূর্ণ তাওবা, পাপ পরিহার, ভালো কাজে প্রতিযোগিতা, আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এমন কাজগুলো, ইবাদতে একাগ্রতা, সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহের মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা, সন্তুষ্টি ও জান্নাতের পথে অগ্রগামী হয়ে থাকে।
পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা কেন প্রয়োজন
কোরআন ও হাদিসে পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতার একাধিক অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। যার কয়েকটি হলো :
১. আল্লাহর নির্দেশ : মহান আল্লাহর নির্দেশ হলো মুমিন যেন পুণ্যের কাজে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেকের একটি দিক আছে, যেদিকে সে মুখ করে। অতএব তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কোরো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহ তোমাদের একত্র করবেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৪৮)
আল্লামা সাদি বলেন, পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করার আদেশ ভালো কাজ করার সাধারণ নির্দেশের চেয়ে বেশি কিছু বোঝায়। কেননা এটা পুণ্যের কাজ, তার পূর্ণতা, আনুষঙ্গিক বিষয়ের সম্মিলন ও প্রতিযোগিতাকে বোঝায়। (তাফসিরে সাদি)
২. রাসুলের নির্দেশ : রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও মুমিনদের নেক কাজে অগ্রগামী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অন্ধকার রাতের টুকরার মতো বিপর্যয় আগমনের আগেই তোমরা সৎকাজের প্রতি অগ্রসর হও। সে সময় যে ব্যক্তি সকাল বেলায় মুমিন থাকবে সে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলায় মুমিন থাকবে সে সকালে কাফির হয়ে যাবে। মানুষ দুনিয়াবি স্বার্থের বিনিময়ে তার ধর্ম বিক্রয় করে দেবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৮)
৩. মুমিন পিছিয়ে থাকে না : একজন মুমিন পুণ্যের কাজে কখনো পিছিয়ে থাকতে পারে না; বরং সে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর অগ্রবর্তীরাই তো অগ্রবর্তী, তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত নিয়ামতপূর্ণ উদ্যানে।’ (সুরা ওয়াকিয়াহ, আয়াত : ১০-১২)
৪. ঈমানের দাবি : মুমিনের ঈমানের দাবি হলো, সে পুণ্যের কাজে বিলম্ব করবে না এবং তাতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ এবং শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সৎকাজের নির্দেশ দেয়, অসৎকাজে নিষেধ করে এবং তারা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করে। তারাই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১৪)
৫. জান্নাত লাভের প্রতিযোগিতা : পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করার অর্থ হলো জান্নাত লাভে প্রতিযোগিতা করা। পুণ্যের কাজে অগ্রগামী হয়ে মুমিন জান্নাতের প্রতিই অগ্রগামী হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবে। তাদের মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে। তার মোহর মিসকের, এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ২৪-২৬)
৬. অগ্রগামীদের মর্যাদা সবার ওপরে : পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বান্দার অবস্থা বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে পুণ্যের কাজে অগ্রগামীদের মর্যাদা সবার ওপরে। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে, যাদের আমি মনোনীত করেছি; তবে তাদের মধ্যে কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ মধ্যপন্থী এবং কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই মহাঅনুগ্রহ।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৩২)
৭. মুনাফিকরা পুণ্যের কাজে পিছিয়ে যায় : পুণ্যের কাজে পিছিয়ে থাকা ও অলসতা করা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। বস্তুত তিনি তাদের তার শাস্তি দেন আর যখন তারা নামাজে দাঁড়ায়, তখন শৈথিল্যের সঙ্গে দাঁড়ায়, কেবল লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২)