অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে রোজার ভূমিকা

প্রকাশকালঃ ০৮ এপ্রিল ২০২৩ ১২:২৪ অপরাহ্ণ ৩৫২ বার পঠিত
অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে রোজার ভূমিকা

ধুনিক পৃথিবীতে অপরাধ দমনের দুটি ব্যবস্থা আছে—আইন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। সত্যি কথা বলতে কী, এ দুই পন্থায় সমাজ থেকে অপরাধ দমন বা নির্মূল সম্ভব নয়। সম্ভব নয় বলেই বিশ্বে দিন দিন অপরাধ ও অপকর্ম বাড়ছে। একের পর এক আইন প্রণয়ন করা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা হয় না; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনকে ব্যবহার করা হয় বেআইনি কাজে।

মহান আল্লাহ এ পৃথিবীকে অপরাধমুক্ত করার জন্য তিনটি ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন।


এক. আইন (কোরআন ও সুন্নাহ)।

দুই. তাকওয়া (খোদাভীতির মাধ্যমে আইনের প্রতি মানুষকে অনুগত করে তোলা)।

তিন. আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।


ইতিহাস সাক্ষী, এই ব্যবস্থাপত্র শত ভাগ সফল হয়েছিল। কারণ এতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আইন প্রণয়নের পরই মানুষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়া আইন বাস্তবায়নে শত ভাগ সফল হয়েছিল। সুরা মায়েদার ৯০ নম্বর আয়াত নাজিল করে যখন মদ নিষিদ্ধ করা হলো, তখন রাসুলে আকরাম (সা.) হাফেজ সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন গলিতে গলিতে আয়াতটি পাঠ করার জন্য। আইন প্রণেতার ভয় এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধার ফলে তখন কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক ছাড়াই সাহাবায়ে কেরাম মদ ত্যাগ করলেন। মদ নিষিদ্ধ হওয়ার ঘোষণা শুনে যাঁর হাতে মদের গ্লাস ছিল তিনি তা ছুড়ে ফেললেন, যাঁর মুখে মদ ছিল তিনি তা ফেলে দিয়ে কুলি করলেন, যিনি ওই সময় মদ পানরত ছিলেন, তিনি গলায় আঙুল দিয়ে বমি করে পেট থেকে মদ বের করার চেষ্টা করলেন। যাঁর বাড়িতে মদের কলসি ছিল, তিনি লাথি মেরে তা ভেঙে ফেললেন। মদিনার রাস্তায় মদ প্রবাহিত হয়ে গেল। (ইবনে কাসির : ৭/৯০৯)

 

রোজা অপরাধ দমনের দ্বিতীয় পন্থা কার্যকর করে তোলে। রোজার পরিপূর্ণ ফজিলত পেতে হলে পাপ বর্জন করতে হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় কাজ ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে না পারবে, তার পানাহার ত্যাগ করা আল্লাহ তাআলার কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি : ৫/২২৫১)

 

রোজার মাধ্যমে মানুষের সততা ও নিষ্ঠা বৃদ্ধি পায়। রোজাদার ব্যক্তির সৎ ও পুণ্যবান থাকার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে সমাজে নীতিনৈতিকতা ও সততার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। রোজাদার ব্যক্তি রোজা রেখে চরম ধৈর্য, সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতার পরিচয় দেয়। এখানে তার আল্লাহভীতি ও নৈতিক শক্তি প্রকাশ পায়। এ মাসে পরনিন্দা, মিথ্যা, অহেতুক কথা ও কাজ বর্জন করার কথা বলা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রোজা থাকে, সে যেন অশ্লীল কথাবার্তা না বলে এবং মূর্খের মতো কাজ না করে। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজাদার, আমি রোজাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৪, মুসলিম, হাদিস : ১১৫১)

 

রমজানে বৈধভাবে উপার্জনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কেননা হারাম বস্তু খেয়ে ইবাদত করলে তা কবুল হয় না। এভাবেই রোজা ও রমজান অপরাধ দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।