শুরু হচ্ছে ১৪৪৬ হিজরী সন, নতুনভাবে জীবন সাজানোর প্রত্যয়

প্রকাশকালঃ ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৬:২১ অপরাহ্ণ ৫৫৮ বার পঠিত
শুরু হচ্ছে ১৪৪৬ হিজরী সন, নতুনভাবে জীবন সাজানোর প্রত্যয়

হিজরি নববর্ষ। একটি নতুন বছরের শুরু। একটি দীর্ঘ বছরের সমাপ্তি। শুরু ও সমাপ্তির আবেদন মানবজীবনে অনেক গভীর। একটি শুরু ও সমাপ্তিতে থাকে বহু পাওয়া না পাওয়ার গল্প। একটি বছর, একটি মাস, একটি সপ্তাহ, একটি দিন এবং মুমিনের প্রতিটি কাজের শুরু ও সমাপ্তির মাঝে থাকে গভীর তাৎপর্য। সবার এই কামনা থাকা উচিত যে পুরো জীবন কিংবা অন্তত সব শুরু ও সমাপ্তি যেন হয় সুন্দর আর অমলিন। নির্মল ও পবিত্র।


শুরু হচ্ছে ১৪৪৬ হিজরি সন। এক বছর আগে ঠিক একইভাবে শুরু হয়েছিল ১৪৪৫ হিজরি। তখন আজকের এই দিনকে মনে হয়েছিল অনেক দূর। যেমন আজ দূর মনে হচ্ছে আগামী বছরকে। কৈশোরের স্মৃতিকে মনে হয় মাত্র পার হলো। বার্ধক্যকে মনে হয় সুদূর ভবিষ্যৎ। এই যে মনে হওয়া, এটা অনেক সময়ই গাফিলতি সৃষ্টি করে। আর জীবন ও জীবনের পরিণতি সম্পর্কে যে ব্যক্তি গাফিলতির শিকার হয় তার দুর্ভোগ হয় বড় বেদনাবহ।

 

নতুন বছর আগমন যেমন খুশি ও আনন্দের, তেমনি জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাওয়ার বেদনাও মিশে থাকে তার সঙ্গে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম ওই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)

 

নতুন বছর মানুষকে ভাবতে শেখায়। নতুন করে মহান রবের আনুগত্যে আহ্বান করে। বছরের প্রথম দিনে মুমিন ব্যক্তি পুরনো বছরের আত্মপর্যালোচনা করবে। বিগত বছরের হিসাব নেবে। নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজাবে। আরো নবোদ্যমে কর্মতৎপর হয়ে উঠবে। কারণ মুসলমানের কাছে প্রতিটি দিন মূল্যবান। প্রতিটি সকাল মানেই নতুন আরেকটি সুযোগ। সেই সুযোগ হলো নিজের ঈমান-আমলকে সমৃদ্ধ করার। গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার। পাপ কাজ না করার।

 

প্রত্যেক মুসলমানের উচিত কোরআন-হাদিসের পথ অনুসরণ করা। নবীজীবনের আদর্শ মেনে চলা। নতুন বছরে তাওবা করে নতুন করে আল্লাহর গোলামির জীবন শুরু করা। নতুন বছরে নিজেকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো। নতুন আত্মপ্রত্যয় গ্রহণ করা। পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিয়ে নতুন করে জীবনের পথ চলা।

 

এই নতুন বছরে প্রতিজ্ঞা হোক পাপমুক্ত জীবনের। পাপ-পঙ্কিলতার আঁধার কেটে পুণ্যের সূর্যোদয় হোক মুমিনের জীবনে। আমরা স্মরণ করি নবী করিম (সা.)-এর এই বাণী—‘দুনিয়াতে তুমি পরদেশি কিংবা পথিকের মতো থাকো এবং নিজেকে কবরবাসীদের মধ্যে গণ্য করো। (অর্থাৎ তোমাকে যে নিশ্চিত কবরে যেতে হবে, সেটা মনে রাখো)। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৩)

 

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) কতই না সুন্দর বলেছেন, ‘তুমি যখন সন্ধ্যায় উপনীত হও তখন সকালের অপেক্ষা কোরো না। যখন সকালে উপনীত হও, সন্ধ্যার অপেক্ষা কোরো না। সুস্থতার সময়ই অসুস্থতাকালের প্রস্তুতি নাও এবং জীবন থাকতেই নাও মৃত্যুর প্রস্তুতি। হে আল্লাহর বান্দা! তুমি তো জানো না আগামীকাল তোমার কী উপাধি হবে (জীবিত না মৃত)!’  (বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬)

 

নতুন বছরের সূচনা হোক দোয়ার মাধ্যমে

বছরের শুরুতে কৃত সব গুনাহ থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে পানাহ চাওয়া উচিত। গুনাহমুক্ত নতুন জীবনের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করা দরকার। এ সময় কোরআন ও হাদিসের দোয়াগুলো আবেগের সঙ্গে পড়া। শুধু মুখের পড়া নয়, বরং দোয়ার অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করে বিষয়গুলো আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়া।

 

নতুন মাসের চাঁদ দেখে নবীজি (সা.) এই দোয়া পড়তেন : আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’

 

অর্থ : হে আল্লাহ! এই চাঁদকে আপনি আমাদের জন্য বরকত ও ঈমান এবং শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন। (হে চাঁদ!) আমার ও তোমার রব আল্লাহ।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫১)

 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সব ধরনের গাফিলতি দূর করে পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত সুন্দর জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। নবোদ্যমে ঈমান-আমলের সঙ্গে নতুন বছর শুরু করার শক্তি দান করুন। আমিন।