কুমারখালীতে সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানে মাংসের বদলে ঝোল দেওয়ায় সংঘর্ষ

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৩:০১ অপরাহ্ণ   |   ৮৪ বার পঠিত
কুমারখালীতে সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানে মাংসের বদলে ঝোল দেওয়ায় সংঘর্ষ

ঢাকা প্রেস নিউজ

 

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানে মাংসের বদলে বারবার ঝোল দেওয়াকে কেন্দ্র করে খাবার পরিবেশকদের সঙ্গে আমন্ত্রিতদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৪ জন আহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
 

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামে রাশিদুল ইসলামের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। তাঁর ছেলে রাফির সুন্নতে খতনা উপলক্ষে দাওয়াতের আয়োজন করা হয়েছিল।
 

আহতরা হলেন— নন্দলালপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের আকবরের ছেলে মাহফুজুর রহমান শান্ত (২০), চান্নু হোসেন (৩৫), কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং ইয়াকুবের ছেলে জামিরুল (১৯)।
 

আহত শান্তর শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং তার মাথায় কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
 

পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, রাশিদুলের ছেলে রাফির সুন্নতে খতনা উপলক্ষে অন্তত ৩০০ জন আত্মীয় ও প্রতিবেশীকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। বিকেলে সাজানো প্যান্ডেলে খাওয়া-দাওয়া চলছিল, যেখানে প্রতিবেশী আকবরের স্ত্রী, দুই সন্তান শান্ত ও চান্নুসহ তার পরিবারের আরও আটজন এক টেবিলে বসে খাচ্ছিলেন। খাবারের পরিবেশক ছিলেন রাফির মামা শহিদুল। এ সময় চান্নু মাংসের ঝোলের গামলা বদলে ভালো মাংস আনতে বলেন।
 

শহিদুল কয়েকবার গামলা বদল করে দিলেও প্রত্যেকবার গামলায় অতিরিক্ত ঝোল থাকায় বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এরপর অজ্ঞাত কেউ শান্তর মাথায় চেয়ার দিয়ে আঘাত করে। এর পরপরই প্রায় ঘণ্টাব্যাপী পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
 

আহত শান্ত বলেন, "বারবার মাংসের বদলে ঝোল দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে আমার মাথায় চেয়ার দিয়ে আঘাত করে ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি থানায় মামলা করব।"
 

স্থানীয় একটি সংবাদসূত্র জানায়, সড়কের পাশে রাফির ছবি সহ সজ্জিত গেট এবং বাড়ির পেছনে বাগানে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল। প্যান্ডেলের ভেতরে ভাঙা চেয়ার ও টেবিল পড়ে ছিল, এবং দুপক্ষের বাকবিতণ্ডা চলছিল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কাজ করছে, আর উৎসুক জনতা ও স্বজনরা ঝগড়া দেখছিলেন।
 

রাশিদুল বলেন, "মাংসের ঝোল নিয়ে প্যান্ডেলে মারামারি ও ভাঙচুর হয়েছে। অনুষ্ঠানটি এখন বিষাদে পরিণত হয়েছে। আমি শান্তি চাই।"
 

আহত চান্নু হোসেন জানান, "চাচাতো ভাইয়ের ছেলে রাফির সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। মাংস চাওয়ায় রাফির মামা শহিদুল ও তার লোকজন আমাদের পিটিয়েছে এবং মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমরা বিচার চাই।"
 

শহিদুল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "বারবার মাংসের গামলা বদল করার পরও চান্নু অভিযোগ করতে থাকেন। তর্কাতর্কি করতে করতে চান্নুরা আমাকে মারধর করেছে, জামা ছিঁড়েছে এবং চোখ ফুলিয়ে দিয়েছে। ভিড়ের মধ্যে কে কার মাথা ফাটিয়েছে তা জানি না।"
 

স্থানীয়দের মতে, অনুষ্ঠান বাড়িতে সাধারণত ভাল খাবার থাকে না, বরং অতিরিক্ত ঝোলের মাংস থাকে। এই কারণে তাদের মধ্যে মারামারি এবং ভাঙচুর ঘটেছে, যা দুঃখজনক।
 

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক মো. সোহাগ শিকদার বলেন, "সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানে মাংসের বদলে বারবার ঝোল দেওয়াকে কেন্দ্র করে খাবার পরিবেশকদের সঙ্গে আমন্ত্রিতদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যাতে ৪ জন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"