মুরাদনগর উপজেলা প্রতিনিধি:-
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার এক গ্রামে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলা হঠাৎ করেই তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভুক্তভোগী। শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে তিনি নিজেই থানায় মামলা করেছিলেন। কিন্তু মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে রবিবার (২৯ জুন) সকালে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, মামলা আর চালিয়ে যেতে চান না।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি নিজের ইচ্ছায় মামলা করেছি, কেউ চাপ দেয়নি। তবে এখন আমি মামলা প্রত্যাহার করছি, কারণ আমার স্বামী আমাকে আর গ্রহণ করছেন না। ফোন করলেও কথা বলেন না, ফোনও ধরেন না।” উল্লেখ্য, ওই নারীর স্বামী দুবাই প্রবাসী।
তিনি আরও বলেন, “আমি বিচার চাই না, কোনো ঝামেলাও চাই না। যাদের ধরা হয়েছে, তারা যেন মুক্তি পায়।”
ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে। বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসা ওই নারী ছিলেন একা। পাশেই পূজা হচ্ছিল, পরিবারের অন্যরা সেখানে গিয়েছিলেন। রাত আনুমানিক ১০টার দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি ফজর আলী (৩৮) ঘরের দরজা খুলতে বলেন। তিনি রাজি না হলে ফজর আলী দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন—এমনই অভিযোগ মামলার এজাহারে।
পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, “সেদিন রাতে ওই বাড়ি থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। ভয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে যাই। গিয়ে দেখি দরজা ভাঙা, আর ওই নারী অসহায় অবস্থায়। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করি। এ সময় কেউ কেউ তাকে মারধর ও ভিডিও করে। পরে বোঝা যায়, সে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে ধরে পিটুনি দেয়। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখান থেকে সে পালিয়ে যায়।”
এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার ভোরে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুরাদনগরেই অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অন্য চারজন—সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিককে। তারা ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আটক হন। সকলেই মুরাদনগর উপজেলার বাসিন্দা।
তবে মামলা তুলে নেওয়ার ঘোষণার পর স্থানীয়দের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, ভুক্তভোগী নারী ও অভিযুক্ত ফজর আলীর মধ্যে আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। যদিও নারী তা সাফভাবে অস্বীকার করে বলেন, “আমার ওর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না। শুধু প্রয়োজনে টাকা-পয়সা নিয়ে কথা হতো। সে আমাকে টাকা দিত, আমি তা ফেরত দিতাম।”
প্রেসের সামনে তিনি জোর দিয়ে বলেন, কোনো চাপ বা অর্থের বিনিময়ে তিনি মামলা তুলছেন না। বরং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়, এক ধরনের ‘জিদের বশে’ তিনি মামলা করেছিলেন।