বিএনপির প্রার্থী তালিকায় ‘তারেক রহমানের গ্রিন সিগন্যাল’ — চূড়ান্তের পথে মনোনয়ন প্রক্রিয়া

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৫৫ অপরাহ্ণ   |   ৬৬ বার পঠিত
বিএনপির প্রার্থী তালিকায় ‘তারেক রহমানের গ্রিন সিগন্যাল’ — চূড়ান্তের পথে মনোনয়ন প্রক্রিয়া

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি এখন এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি, তবু দলের অভ্যন্তরে প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।


লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই এই প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করছেন—মনোনয়ন যাচাই-বাছাই, প্রার্থী বাছাই ও সাংগঠনিক মূল্যায়নের প্রতিটি ধাপে তার সক্রিয় সম্পৃক্ততা রয়েছে।


🔹 মনোনয়ন যাচাইয়ের চূড়ান্ত ধাপ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির মনোনয়ন যাচাই-বাছাই এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক সক্ষমতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তারেক রহমান। তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনেক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং স্থানীয় থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মতামত নিয়েছেন।
 

দলজুড়ে এখন একটি ফোন কলই সবচেয়ে প্রত্যাশিত বিষয়—‘তারেক রহমানের কল মানেই গ্রিন সিগন্যাল’। যাদের কাছে এই কল পৌঁছেছে, তারা প্রায় নিশ্চিত মনোনয়নপ্রাপ্ত।


🔹 মাঠপর্যায়ের রিপোর্টে গুরুত্ব

তারেক রহমান তার নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিটি আসনের মাঠপর্যায়ের অবস্থা, জনসম্পৃক্ততা ও ভোটার প্রতিক্রিয়া যাচাই করছেন। অনেক ক্ষেত্রে তিনি স্থানীয় সিনিয়র নেতাদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
 

এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“এবার শুধু সিনিয়রিটি নয়, মাঠে যাদের গ্রহণযোগ্যতা ও সক্রিয়তা আছে, তারাই গ্রিন সিগন্যাল পাচ্ছেন।”


🔹 ঢাকায় তরুণ নেতৃত্বের উত্থান

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন আসনে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন তরুণ ও অভিজ্ঞ প্রার্থী তারেক রহমানের ফোন পেয়েছেন এবং তারা নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন।
 

নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী:

  • ঢাকা-৩: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

  • ঢাকা-৪: তানভীর আহমেদ রবিন

  • ঢাকা-৬: ইশরাক হোসেন

  • ঢাকা-৮: মির্জা আব্বাস

  • ঢাকা-১০: ব্যারিস্টার নাছির উদ্দিন আহমেদ অসীম

  • ঢাকা-১২: হাবিব উন খান নবী সোহেল

  • ঢাকা-১৩: নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ববি হাজ্জাজ

  • ঢাকা-১৪: ‘মায়ের ডাক’ আন্দোলনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি

  • ঢাকা-১৫: মামুন হাসান

  • ঢাকা-১৬: আমিনুল হক
     

বিশেষভাবে আলোচনায় রয়েছেন সানজিদা ইসলাম তুলি, কারণ তিনি বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন-এর বোন, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার হন। তাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তারেক রহমান সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন
 

এদিকে, ঢাকা-১৭ আসনটি শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ-এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে—যা বিএনপির জোট রাজনীতির কৌশলগত অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।


🔹 “নির্ভার আসন” ও শীর্ষ নেতৃত্ব

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ৬০টি আসনে বিএনপি এখন ‘নির্ভার’, অর্থাৎ এসব আসনে প্রার্থী নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব বা অনিশ্চয়তা নেই।

এই আসনগুলোতে মনোনয়ন পাচ্ছেন দলের অভিজ্ঞ ও জনপ্রিয় নেতারা, যেমন—

  • ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১)

  • মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১)

  • ড. আব্দুল মঈন খান (নরসিংদী-২)

  • ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ-২)

  • সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১)

  • মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩)

  • বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩)

  • শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (লক্ষ্মীপুর-৩)

  • আসাদুল হাবিব দুলু (লালমনিরহাট-৩)

  • ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-১)

  • ফজলুল হক মিলন (গাজীপুর-৫)

  • ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির (পঞ্চগড়-১)

  • সাইফুল ইসলাম ফিরোজ (ঝিনাইদহ-৪)

  • প্রমুখ
     

দলীয় সূত্র মতে, এসব প্রার্থীর অতীত কর্মতৎপরতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা মূল্যায়ন করে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


🔹 বিভাগীয় বৈঠক ও মাঠপর্যায়ের নির্দেশনা

১৯ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে সিলেট বিভাগের চার জেলার প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে মনোনয়ন, প্রচারণা কৌশল, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও মাঠপর্যায়ের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
 

এর আগে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের নেতাদের সঙ্গেও একই রকম বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা বিভাগের বৈঠক শিগগিরই অনুষ্ঠিত হবে।


🔹 হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন,

“এবার মনোনয়ন শুধুই গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজে স্থানীয় মতামত যাচাই করেছেন।”

দলীয় হাইকমান্ড স্পষ্ট করেছে—
যিনি মনোনয়ন পাবেন, সবাইকে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। কোনো বিভক্তি বা অভ্যন্তরীণ বিরোধ বরদাস্ত করা হবে না। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভাঙলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই কঠোর অবস্থান বিএনপির ভেতরে ঐক্য ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। অতীতে স্থানীয় কোন্দলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল—এবার হাইকমান্ড সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিচ্ছে।


🔹 রাজনৈতিক কৌশল ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির এই মনোনয়ন প্রক্রিয়া দলের ভিতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার নতুন ধারা তৈরি করছে।
তারেক রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা একদিকে নেতৃত্বে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনছে, অন্যদিকে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করছে।

 

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান,

“জোট গঠনের বিষয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। নির্বাচন সামনে রেখে কৌশলগত সমঝোতার সম্ভাবনাও রয়েছে।”

এই নতুন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিএনপি একসঙ্গে অভিজ্ঞতা ও তরুণ নেতৃত্বের সংমিশ্রণ ঘটাচ্ছে। দলের অভ্যন্তরে তৈরি হচ্ছে পেশাদারিত্ব, সংগঠিত নেতৃত্ব ও জনসম্পৃক্ততার নতুন মানদণ্ড, যা আসন্ন নির্বাচনে বিএনপিকে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ এনে দিতে পারে।