মারায়ং তং ভ্রমন গাইড! কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?

প্রকাশকালঃ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ ২২২ বার পঠিত
মারায়ং তং ভ্রমন গাইড! কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?

বান্দরবানের আলীকদমে অবস্থিত মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড় যার উচ্চতা প্রায় ১৬৮০ ফিট। অনেকে এই পাহাড়কে মারায়ন তং জাদি/মারায়ন ডং/মারাইথং নামে পরিচিত। পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় এক বৌদ্ধ উপাসনালয় রয়েছে। একটি ছোট বটগাছসহ আরো দুটি গাছ। যার চারদিকে খোলা ও ওপরের দিকে চালা। এতে আছে বুদ্ধের এক বিশাল মূর্তি। খোলা প্রকৃতির মাঝে বৌদ্ধের বিশাল মূর্তি এই জায়গাটিকে আরও গাম্ভির্যময় করে তোলেছে। এছাড়া পাহাড়ের ওপরের অংশটুকু সমতল। দর্শনীয় স্থান হিসেবে জায়গাটা বেশ চমৎকার। এখান থেকে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সেসবের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে জনবসতি। নিচে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। তার দুই কোলে দেখা যায় ফসলের ক্ষেত। পাহাড়ের চূড়ায় পছন্দকারী পর্যটকরা চলে আসেন বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মারায়ন তং এই জাদি পাহাড়ে। 

 

ত্রিপুরা, মারমা, মুরং সহ বেশিকিছু আদিবাসীর বসবাস এই মারায়ন তং পাহাড়ে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে থাকা আদিবাসী পাড়াগুলো বিশেষ বৈচিত্রতা যুক্ত করেছে আলীকদমের এই পাহাড়ি সৌন্দর্যে। পাহাড়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবনযাত্রা এবং নিখাদ প্রকৃতি দুচোখ ভরিয়ে দেয় এখানে আগত পর্যটকদের।

এই পাহাড়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠতে হাঁটতে হয় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তা। ট্রেইলের শুরু থেকে একদম চূড়া পর্যন্ত পুরোটাই খাড়া রাস্তা। চূড়ায় উঠতে হবে সর্বমোট ৫টি ট্রেইল, যার মধ্যে সবচেয়ে খাড়া ট্রেইলটা ৭২ ডিগ্রি কোণে ভূমি থেকে চূড়ার দিকে চলে গিয়েছে। তবুও যত ওপরে উঠবেন, চারপাশ আরও বেশি সুন্দর হয়ে উঠবে।এই পাহাড়ের নিচে থাকে মারমারা আর পাহাড়ের ভাজে ভাজে রয়েছে মুরুংদের পাড়া। পাহাড়ের ঢালে ঢালে তাদের বাড়ি। মাটি থেকে সামান্য ওপরে এদের টংঘর। এসব ঘরের নিচে থাকে বিভিন্ন গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ছাগল ও শুকর। কখনো কখনো প্রয়োজনীয় জ্বালানী কাঠও স্তুপ করে রাখা হয়।

 

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যখন চূড়ায় উঠবেন সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে যাবেন। প্রকৃতির রূপ যে এতো সুন্দর এইখানে না আসলে বুঝতে পারবেন না। বিকেলে সূর্য যখন পাহাড়ের কোলে ঘুমিয়ে যায়, প্রকৃতিকে অনন্য একটা রূপের দেখা যায়। মনে হয় পাহাড় নিজের ছায়াতলে খুব সযত্নে আলতো করে সূর্যটাকে লুকিয়ে রেখে দিচ্ছে। বিকেলের স্নিগ্ধ আলো আর সন্ধ্যার রক্তিম আকাশের মিষ্টি আবহ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থানরত সবাইকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে। চারদিকে স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার সময়টাতে চূড়ায় থাকা সকল কিছু খুব গভীরভাবে অনুভব করা যায়।


কিভাবে যাবেন:


রাজধানী ঢাকা হতে সরাসরি আলীকদমগামী বাস সার্ভিস রয়েছে। আলীকদম বাসস্ট্যান্ড পৌঁছার আগেই আবাসিক নামক জায়গায় আপনাকে নেমে যেতে হবে। সেখান থেকে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মারায়ং তং যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে হেটে মারায়ং তং পাহাড় চূড়ায় পৌঁছতে ২ ঘন্টার মত সময় লাগবে। বাস ছাড়াও ট্রেনে জেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেনে (ভাড়া ১২০/-) করে চট্রগ্রাম আসতে হবে। চট্রগ্রাম রেইল স্টেশন থেকে অটোতে করে (ভাড়া ২০/-) নতুন ব্রিজ গিয়ে সেখান থেকে লোকাল বাসে (ভাড়া ১৫০-১৮০/-) চকরিয়া যেতে হবে। তারপর চকরিয়া থেকে জিপে করে (ভাড়া ১১০/-) আলীকদম আবাসিক যেতে হবে। চট্রগ্রাম থেকে চাইলে জীপ রিসার্ভ নিয়ে আলীকদম যেতে পারবেন।জীপ রিসার্ভ করতে ভাড়া লাগবে প্রায় ১০০০-১২০০ টাকা। এক জীপে ১০-১২ জন যাওয়া যায়। আলীকদম গিয়ে সেখান থেকে আটো নিয়ে যেতে হবে মারায়ন তং পাহাড়ের পদতলে। সেখান থেকে হাতের ডানের রাস্তা ধরে দুই ঘণ্টা হাঁটলেই মারায়ন তং বা মেরাইতং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে যাবেন।

কোথায় থাকবেন:


মূলত মারায়ং তং যারা ভ্রমণ করতে যায় তারা ক্যাম্পিং করে সেখানে থাকার জন্যে ভ্রমণে যায়। তবে যদি আপনার আলীকদমে থাকার প্রয়োজন হয়ে তাহলে উপজেলা রোডের “দ্যা দামতুয়া ইন” হোটেলে অথবা জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকতে পারবেন। এছাড়া পান বাজারে সাধারণ মানের একটি বোর্ডিং আছে। 

 

মারায়ন তং ভ্রমনের জন্য বিশেষ টিপস:


যাত্রাপথে প্রচুর পরিমাণে পানি, গ্লুকোজ, স্যালাইন, শুকনো খাবার, ফ্রাস্ট এইড বক্স, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নেবেন। রান্না করতে চাইলে প্রয়োজনীয় উপকরণ, ম্যাচ ও জ্বালানিও নিয়ে নেবেন। আগুন জ্বালাতে শুকনো কাঠের অভাব হবে না। রাতে ক্যাম্পিং করতে চাইলে সঙ্গে তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ, হালকা চাদর নিয়ে নেবেন। কেননা গরমের মৌসুমেও রাতে খানিকটা ঠাণ্ডা পড়ে পাহাড়ে। পাহাড়ে ওঠার আগে সমতলেই স্থানীয় প্রশাসনের কাউকে পেলে নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়ে রাখবেন। তাঁদের কোনো পরামর্শ থাকলে সেগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুনু। আর পাহাড়ে ওঠা কিংবা ক্যাম্পিং করতে চাইলে পথিমধ্যে সংশ্লিষ্ট পাড়ার হেডম্যানদের জানিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে তাঁদের কাছ থেকে ফোন নম্বর চেয়ে নেবেন। পরে সাহায্যের প্রয়োজন হলে তাঁদের জানাতে পারেন। পাড়ার আশপাশে চলতি পথে পাহাড়িদের কোনো ফল বা ফুলের গাছ থেকে অনুমতি ছাড়া কিছু পাড়তে বা ছিঁড়বেন না। দরকার হলে কিনে নেবেন। সস্তাতেই তা পাওয়া যাবে।