ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুসলিম সংস্কৃতির রাজধানী ইস্তাম্বুল শহর বিজয়ের ৫৭০তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। সোমবার (২৯ মে) এই উপলক্ষে বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য নিদর্শন আয়া সোফিয়া মসজিদে ফজর নামাজের পর বিশেষ দোয়া ও জিকির অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন দেশটির সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।
তুর্কি সংবাদ মাধ্যম ডেইলি সাবাহ সূত্রে জানা যায়, সোমবার আয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদে অনুষ্ঠিত ফজরের নামাজে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা আসেন।
এতে দেশটির ধর্ম বিষয়ক প্রধান শায়খ ড. আলি ইরবাশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সোইলুসহ সরকারের উচ্চপদস্থা কর্মকর্তারাও তাতে অংশ নেন।
শুভেচ্ছা বার্তায় এরদোয়ান বলেন, ‘ইস্তাম্বুল বিজয়ের ৫৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা। ইতিহাসে খোদাই করে লেখা হয়েছে, আনাতোলিয়া সব সময় তুর্কিদের মাতৃভূমি হিসেবে থাকবে। আমি সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ ও তার বীর সেনাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, যিনি মহানবী (সা.)-এর সুসংবাদ অর্জন করেছিলেন এবং নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন ও একটি যুগের অবসান ঘটিয়েছেন।’
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মূলত ইস্তাম্বুল একটি কসমোপলিটন তথা বহুজাতিক শহর। ১৪৫৩ সালে উসমানীয় শাসক ২১ বছর বয়সী দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল ফাতিহের আগে অন্তত ২৮ বার শহরটি অবরোধ করা হয়। ১৪৫৩ সালের ৬ এপ্রিল থেকে ২৯ মে পর্যন্ত অবরোধের সম্মুখীন হয়। এরপর চূড়ান্তভাবে শহরটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধিকারে আসে।
তারও আগে মহান সেলজুক সুলতান আলপ আরসালানও শহরটি জয় করলেও তা ধরে রাখতে পারেননি।
বর্তমান তুরস্কের ইস্তাম্বুল নগরী একটি প্রাচীন শহর। মুসলিম বিজয়ের আগে তা কনস্টান্টিনোপলের অধীনে ছিল। কনস্টান্টিনোপলকে আরবিতে কুস্তুনতুনিয়া বলা হয়। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এই অঞ্চল বিজয়ের ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন।
তাই এটি বিজয়ের জন্য মুসলিমরা অত্যন্ত আগ্রহী ও উৎসাহী ছিলেন। হাদিসে এসেছে মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমরা কনস্টান্টিনোপল বিজয় করবে। ওই সেনাপতি উত্তম সেনাপতি হবে এবং ওই সেনাবাহিনী উত্তম সেনাবাহিনী হবে। ’ (মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫, হাদিস : ১৮৯৫৭; মুসতাদরাকে হাকেম : ৫/৬০৩, হাদিস : ৮৩৪৯; তাবারানি, হাদিস : ১২১৬)
১৪৫৩ সালের ২৯ মে মাত্র ২১ বছর বয়সে উসমানি সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল ফাতিহ (রহ.) এই শহর জয় করেন। তিনি ৮৩৫ হিজরির ২৭ রজব মোতাবেক ১৪৩২ সালের ৩০ মার্চ উসমানি সম্রাজ্যের তৎকালীন রাজধানী ‘এদিরনে’ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন উসমানী সম্রাজ্যের ৬ষ্ঠ শাসক সুলতান দ্বিতীয় মুরাদ এবং তার মাতার নাম হুমা ওয়ালিদা খাতুন।
অবশেষে সুলতান মুহাম্মদ ইস্তাম্বুল বিজয়ের প্রথম দিন শহরে প্রবেশ করে আয়া সোফিয়ায় যান এবং সেখানে নামাজ পড়েন। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এখন থেকে আমার সিংহাসন ইস্তাম্বুল।’ মূলত বিরতিসহ একাধারে ৫৪ দিনের অবরোধের পর ইস্তাম্বুল বিজয় হয়েছিল। এই বিজয়ের ফলে এক হাজার ৫৮ বছরের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে। এরপর থেকে ইস্তাম্বুল শহর অটোমান সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হয়।