চারঘাটে খেজুর গাছিদের কর্মব্যস্ততায় শীতের আগমনী বার্তা

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ০২:৩১ অপরাহ্ণ   |   ৩১ বার পঠিত
চারঘাটে খেজুর গাছিদের কর্মব্যস্ততায় শীতের আগমনী বার্তা

মোঃ শফিকুল ইসলাম, চারঘাট (রাজশাহী):-


 

শিশির ভেজা ঘাস, কুয়াশায় মোড়া সকাল—হেমন্তের শেষপ্রান্তে প্রকৃতি জানিয়ে দিচ্ছে, শীত এসে গেছে। সেই সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার খেজুর গাছিরা। পদ্মার তীরঘেঁষা এই অঞ্চলে নভেম্বরের শুরুতেই গাছ থেকে ঝরতে শুরু করেছে মিষ্টি খেজুরের রস।
 

চারঘাট উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় প্রায় ২ লাখ খেজুর গাছ রয়েছে। চলতি মৌসুমে এসব গাছ থেকে প্রায় ২ হাজার ১৬৭ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চাঙা হবে স্থানীয় কৃষি অর্থনীতি, কর্মসংস্থান হবে বহু মানুষের।
 

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার চারঘাট, সরদহ, ভায়ালক্ষীপুর, শলুয়া ও নিমপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চলছে খেজুর গাছ প্রস্তুতের জোর প্রস্তুতি। সকাল হলেই ঠুঙ্গি, বাইলধারা ও দা হাতে মাঠের দিকে ছুটছেন গাছিরা। কেউ নিপুণ হাতে গাছের মাথা পরিষ্কার করছেন, কেউ তৈরি করছেন রস সংগ্রহের পাত্র। গাছের মাথা পরিষ্কারের পর দুই সপ্তাহ বিশ্রাম দিয়ে রস সংগ্রহ শুরু হয়। এভাবেই গাছিদের হাতে শুরু হয় শীতের প্রধান উৎসব—খেজুর রস ও গুড় তৈরির মহাযজ্ঞ।
 

নিমপাড়া ইউনিয়নের কালোহাটি গ্রামের চাষি রবিঊল ইসলাম জানান, তাঁর শতাধিক খেজুর গাছের মধ্যে প্রায় অর্ধশত থেকে ইতোমধ্যে রস সংগ্রহ শুরু হয়েছে। বাকিগুলোও প্রস্তুত। তিনি বলেন,

“গত বছর শতাধিক গাছ থেকে গুড় তৈরি করে প্রায় তিন লাখ টাকা লাভ করেছি। গাছের পরিচর্যায় তেমন খরচও হয়নি। পাশাপাশি প্রায় ৩০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছিল। এবারও বাজার ভালো থাকলে আরও বেশি আয় আশা করছি।”

গাছি সাইফুল ইসলাম বলেন,

“নভেম্বরের শেষ থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত রস সংগ্রহ চলে। প্রতিদিন একজন গাছি ২০-২৫টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। এ সময়টায় আমাদের কাজের ভীষণ চাপ থাকে, তবে এটিই আমাদের আনন্দের মৌসুম।”

চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন,

“এই অঞ্চলের প্রায় ২ লাখ খেজুর গাছ থেকে এ মৌসুমে ২ হাজার ১৬৭ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। শীত এলেই গাছিদের চারপাশে উৎসবমুখর কর্মযজ্ঞ শুরু হয়—যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।”

শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে চারঘাটের গ্রামেগঞ্জে শুরু হয়েছে মিষ্টি রসের ঘ্রাণ, আর গাছিদের কর্মব্যস্ততায় মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।