জামানতবিহীন ও বিনা ভাড়ায় দোকান পাচ্ছেন বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা

প্রকাশকালঃ ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ১২:২০ অপরাহ্ণ ৩৭৯২ বার পঠিত
জামানতবিহীন ও বিনা ভাড়ায় দোকান পাচ্ছেন বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা

ঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য জামানতবিহীন ও বিনা ভাড়ায় দোকান বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে রাজধানীর একটি বিপণিবিতান। ‘কোনাপাড়া শপিং কমপ্লেক্স’ নামের নির্মীয়মাণ এই বিপণিবিতানে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা প্রাথমিকভাবে তিন মাস বিনা ভাড়ায় ব্যবসা করতে পারবেন। শর্ত সাপেক্ষে এই সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিপণিবিতানটির উদ্যোক্তারা।

কোনাপাড়া শপিং কমপ্লেক্সের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ঈদুল আজহার আগে নির্মীয়মাণ এই ভবন পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হবে। তাতে বঙ্গবাজারের যেসব ব্যবসায়ীর সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, তাঁরা সেখানে জামানতবিহীন দোকান নিতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য তাঁদের কাছ থেকে ভাড়াও নেওয়া হবে না, তবে এই সময়সীমা বাড়তে পারে।


বিপণিবিতানটির উদ্যোক্তাদের একজন জহিরুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের অনেকেই আছেন, যাঁরা বঙ্গবাজারের সঙ্গে নানাভাবে ব্যবসায় জড়িত। সেই সূত্রে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের প্রতি তাঁদের আলাদা সহানুভূতি আছে। এটাও ঠিক, আমাদের বিপণিবিতানের কাজ এখনো পুরোটা শেষ হয়নি। দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। তাতে যেসব ব্যবসায়ী নতুন করে শুরু করতে চান, তাঁদের এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।’

বিপণিবিতানটি যাত্রাবাড়ীর অদূরে কোনাপাড়া এলাকায় ঢাকা-ডেমরা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। যাত্রাবাড়ী থেকে বিপণিবিতানটির দূরত্ব সাড়ে তিন কিলোমিটারের মতো। ভবনটি ১৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হতে পারে, তবে দোকানপাট থাকবে ৬ তলা পর্যন্ত। বাকি জায়গা অফিস ও আবাসিক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। প্রতি তলায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার বর্গফুট জায়গা থাকবে এই বিপণিবিতানে। এক বা একাধিক দোকানের জায়গা মিলিয়ে বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা যাবে বলে জানা গেছে।


বিপণিবিতানটির একাধিক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, বঙ্গবাজারের যেসব ব্যবসায়ী কোনাপাড়া শপিং কমপ্লেক্সে যেতে চান, তাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দোকান দেওয়া হবে। এতে দুটি উদ্দেশ্য দেখছেন উদ্যোক্তারা। এক. এর মাধ্যমে শপিং সেন্টারটি দ্রুত চালু করে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ দেওয়া। দুই. বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া। শুধু মালামাল উঠিয়ে তাঁরা ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।


বিপণিবিতানটির উদ্যোক্তারা এটাও মানছেন, নতুন মনে করে অনেকে এখানে আসতে সেভাবে আগ্রহী না–ও হতে পারেন। তবে তাঁদের দাবি, এই বিপণিবিতান চালু হওয়ার পর জমজমাট হতে খুব বেশি দিন সময় লাগবে না। কারণ, ঢাকার এই অংশ দ্রুত বর্ধনশীল। স্থানীয় বাসিন্দারা তো আছেন; পাশাপাশি এই এলাকায় বড় বেশ কয়েকটি আবাসন কোম্পানির আবাসিক প্রকল্পের কাজ চলছে। এই এলাকাকেন্দ্রিক বেশ কিছু ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে।

বিপণিবিতানটির আরেকজন উদ্যোক্তা রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি অংশীদারি মালিকানা প্রকল্প। এখানে অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে আছেন, আমি তাঁদের একজন। বঙ্গবাজারে আগুনের পর আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই, সেখানকার ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু একটা করা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ। তাঁরা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাতে এখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে জামানত তো নিবই না, পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে তিন মাসের কথা বলা হলেও ব্যবসা না জমলে আরও বেশি সময়ের জন্য ভাড়া মওকুফ করা হতে পারে।’


এদিকে বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মালপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকার বেশি। আর মার্কেটগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া দোকানের মালিক-কর্মচারীরা যে মানসিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন, সেই ক্ষতির পরিমাণ ও চাকরিহীনতার আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা দুরূহ বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।