১০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক যাচ্ছে বছরে সাগরে

প্রকাশকালঃ ১০ জুন ২০২৩ ০১:৩৭ অপরাহ্ণ ১৩৩ বার পঠিত
১০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক যাচ্ছে বছরে সাগরে

প্রতি বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হয়। এর প্রায় অর্ধেকই শপিং ব্যাগ, কাপ এবং প্যাকেজিং উপাদানের মতো এককভাবে ব্যবহারের পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই প্লাস্টিকগুলোর মধ্যে প্রতি বছর আনুমানিক ৮ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়ন টন নানাভাবে সাগর-মহাসাগরে নির্গত হয়।

বিশ্ব মহাসাগর দিবসে (৮ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা সাগরে প্লাস্টিক দূষণ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় তুলে ধরেছে।

প্রতিবছর যে পরিমাণ প্লাস্টিক সাগরে ফেলে দেওয়া, এসব প্লাস্টিক একসঙ্গে করলে (প্লাস্টিক ব্যাগের পুরুত্বের সমান) সমতলে আয়তন দাঁড়াবে প্রায় ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। এটি কাতার, জ্যামাইকা বা বাহামার মতো ছোট দেশগুলোর আকারের সমান। এই হারে ৫০ বছর ধরে প্লাস্টিক বর্জ্য নির্গত হতে থাকলে একসাথে এর আয়তন দাঁড়াবে ৫ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। যা প্রায় ফ্রান্স, থাইল্যান্ড বা ইউক্রেনের আকারের সমান।

মহাসাগরের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর টেকসই ব্যবহার ও সুরক্ষার প্রচারের জন্য জাতিসংঘ প্রতি বছর ৮ জুনকে বিশ্ব মহাসাগর দিবস হিসাবে ঘোষণা করে।


প্লাস্টিক কীভাবে সমুদ্রে প্রবেশ করে?
সমস্ত সামুদ্রিক দূষণের ৮০ শতাংশই ঘটে প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে। সমুদ্রে নির্গত হওয়া বেশিরভাগ প্লাস্টিক অনুপযুক্ত বর্জ্য নিষ্পত্তি ব্যবস্থার দলে নদী-নালা দিয়ে স্রোতের সঙ্গে আসে। মাছ ধরার জাল এবং সমুদ্রে চালিত অন্যান্য যানের প্লাস্টিকও ফেলে দেওয়া হয়।

প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং কন্টেইনার ছাড়াও মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত ক্ষুদ্র কণাগুলোও সমুদ্রে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলোর দৈর্ঘ্য ৮ মিলিমিটারেরও কম। মাছ ও সামুদ্রিক নানা প্রাণী এগুলো খেয়ে ফেলে, যা প্রাণী এবং মানুষ উভয়েরই ক্ষতির কারণ হতে পারে।


আনুমানিক ৫০ ট্রিলিয়ন থেকে ৭৫ ট্রিলিয়ন মাইক্রোপ্লাস্টিকের টুকরো বর্তমানে সমুদ্রে রয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা খুব কমই আছে।

কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক লিভার, কিডনি ও অন্ত্রের মতো অঙ্গগুলোতে জমা হতে পারে। উদ্বেগ রয়েছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলো সম্ভাব্যভাবে প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং সেলুলার ক্ষতির কারণ হতে পারে।

বিজ্ঞান লেখক এরিকা সিরিনো বলছেন, সমুদ্রে বসবাসকারী প্রাণীরা ক্ষুদ্র কণাগুলো (মাইক্রোপ্লাস্টিক) প্রচুর পরিমাণে খায়। প্লাস্টিকের টুকরোগুলোতে বিষাক্ত রাসায়নিক রয়েছে। এই রাসায়নিকগুলো ইতিমধ্যে মানব হরমোন এবং প্রাণী হরমোনগুলোতে প্রভাব ফেলছে। এগুলো শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমার কারণ হতে পারে, যা সময়ে সাথে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।


সমুদ্রে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিকের উৎস কোন দেশ?
সায়েন্স অ্যাডভান্সেস রিসার্চের প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, সমুদ্রে পাওয়া সমস্ত প্লাস্টিকের ৮০ শতাংশ আসে এশিয়া থেকে।

মহাসাগরে সমস্ত প্লাস্টিক বর্জ্যের এক তৃতীয়াংশের বেশি (৩৬.৪ শতাংশ) ফিলিপাইন থেকে আসে বলে বলে মনে করা হয়। তালিকায় এরপরেই আছে  ভারত (১২.৯ শতাংশ), মালয়েশিয়া (৭.৫ শতাংশ), চীন (২.৭ শতাংশ) এবং ইন্দোনেশিয়া (৫.৮ শতাংশ)। এই পরিমাণগুলোতে বিদেশে রপ্তানি করা বর্জ্য অন্তর্ভুক্ত নয়, যা সমুদ্রে প্রবেশের উচ্চঝুঁকিতে থাকতে পারে।


প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য এত বিপজ্জনক কেন?
প্লাস্টিকের প্রধান সমস্যা হলো, এগুলো সহজেই বায়বীয় হয় না। এর ফলে এগুলো শত শত বছর ধরে পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এবং মারাত্মক দূষণসমস্যা সৃষ্টি করে।

সমুদ্রে নির্গত প্লাস্টিকগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য ভাসমান থাকে। অবশেষে এগুলো তলদেশে ডুবে যায়। মহাসগরে যত প্লাস্টিক, এর ৯৯ শতাংশই ভূপৃষ্ঠের নিচে মাইক্রোপ্লাস্টিক আকার ধারণ করে আছে।