ইথিওপিয়ান রাজপুত্রের দেহাবশেষ কেন ফেরত দিতে চায় না বাকিংহাম প্যালেস?

প্রকাশকালঃ ২৩ মে ২০২৩ ০৪:৪০ অপরাহ্ণ ১২১ বার পঠিত
ইথিওপিয়ান রাজপুত্রের দেহাবশেষ কেন ফেরত দিতে চায় না বাকিংহাম প্যালেস?

উনিশ শতকে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসেলে সমাহিত করা হয় ইথিওপিয়ান রাজপুত্র আলেমায়েহুকে। সম্প্রতি তার দেহাবশেষ ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ইথিওপিয়ার রাজপরিবার। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বাকিংহাম প্যালেস।

প্রিন্স আলেমায়েহুকে মাত্র সাত বছর বয়সে তার মাতৃভূমি ইথিওপিয়ান থেকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়, যাত্রা পথেই তার মা মারা যাওয়ায় তিনি এতিম হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মারা যান এই রাজকুমার। এরপর যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসেলে তাকে সমাহিত করা হয়। তবে তার পরিবার চায়, তার দেহাবশেষ ইথিওপিয়ায় ফেরত পাঠানো হোক।

ফাসিল মিনাস নামের ইথিওপিয়ার রাজবংশের একজন বিবিসিকে জানান, আমরা একটি পরিবার। ইথিওপিয়ান হিসাবে তার দেহাবশেষ ফিরে পেতে তার দেহাবশেষ সেখানে নেই যেখানে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাকে যুক্তরাজ্যে দাফন করা ঠিক হয়নি।

এদিকে বাকিংহাম প্যালেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, তার দেহাবশেষ অপসারণ করা হলে তা উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলের ক্যাটাকম্বে সমাহিত অন্যদের দেহাবশেষকে প্রভাবিত করতে পারে। তিনি বলেন, আশেপাশের অন্যদের সমাধি স্থানে আঘাত না করে তার দেহাবশেষ উত্তোলন করা সম্ভব হবে না।

আলেমায়েহুর এত অল্প বয়সে যুক্তরাজ্যে আসাটাও ছিল একটি সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ এবং কূটনীতির ব্যর্থতার ফলাফল। ১৮৬২ সালে ইথিওপিয়ার সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করার প্রয়াসে, রাজপুত্রের পিতা সম্রাট দ্বিতীয় টেওড্রোস যুক্তরাজ্যের সাথে একটি মৈত্রী কামনা করেছিলেন, কিন্তু তিনি রানী ভিক্টোরিয়ার কাছ থেকে এর কোন প্রতিক্রিয়া পাননি।

রানীর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে সম্রাট বেশ কয়েকজন ইউরোপীয়কে জিম্মি করেন। তাদের উদ্ধারের জন্য প্রায় ১৩,০০০ ব্রিটিশ সেনা একটি বিশাল সামরিক অভিযান শুরু করে। ১৮৬৮ সালের এপ্রিল মাসে তারা উত্তর ইথিওপিয়ায় একটি পাহাড়ী দুর্গ অবরোধ করে।

এসময় সম্রাট সিদ্ধান্ত ব্রিটিশদের বন্দী হওয়ার চেয়ে নিজের জীবন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এমন পদক্ষেপ তাকে জনগণের কাছে একজন বীরত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ইথিওপিয়ার হাজার হাজার সাংস্কৃতিক ধর্মীয় নিদর্শন লুট করে। এর মধ্যে ছিল সোনার মুকুট, পাণ্ডুলিপি, নেকলেস এবং পোশাক।

 

এসময় ব্রিটিশরা প্রিন্স আলেমায়েহু এবং তার মা সম্রাজ্ঞী তিরুওয়ার্ক উবেকেও ব্রিটেনে নিয়ে যায়। এর পর পরই আলেমায়েহু রানী রানী ভিক্টোরিয়ার আশ্রয়ে শিক্ষা-দিক্ষা লাভ শুরু করেন। এসময় ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন স্পিডি আলেমায়েহুর অভিভাবক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

শিক্ষা গ্রহণ শেষ হলে একপর্যায়ে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ধারণা করা হয় তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এক পর্যায়ে তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে ভেবে সবধরনের চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান

করেন তিনি। অবশেষে দীর্ঘ এক দশক ভিনদেশে নির্বাসনে থাকার পর ১৮৭৯ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মারা যান রাজকুমার আলেমায়েহু।

 

রানী ভিক্টোরিয়া তার মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে ডায়েরিতে লেখেন, টেলিগ্রামের মাধ্যমে খবরটি শুনে খুব শোকাহত এবং মর্মাহত হলাম, আলেমায়েহু আজ সকালে মারা গেছে এটা খুবই দুঃখজনক! একাকী, ভিনদেশে, অভিভাবক বা আত্মীয় ছাড়া। তিনি বলেন, তার জীবন সুখের ছিল না, নানা ধরনের অসুবিধায় ভরা ছিল, এতটাই সংবেদনশীল ছিল যে লোকেরা তার গায়ের রঙের কারণে তার দিকে তাকিয়ে থাকত। আমরা সবাই খুব দুঃখিত। এরপর তিনি সেখানকার উইন্ডসর ক্যাসেলে আলেমায়েহুর দাফনের ব্যবস্থা করেন।

তবে প্রিন্স আলেমায়েহুর লাশ ফেরত দেওয়ার দাবি নতুন নয়। ২০০৭ সালে দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গির্মা ওল্ডে-গিওরগিস তার দেহাবশেষের জন্য রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে অনুরোধ পাঠান। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা নিষ্ফল প্রমাণিত হয়। তবে এবার সদ্য মুকুটধারী রাজা চার্লস তৃতীয় থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করেছিল ইথিওপিয়ার রাজপরিবার।

 

কিন্তু এবারও আশাহত হতে হয় তাদের। তবে ব্রিটিশ-ইথিওপিয়ান সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলুলা পাংখার্স্ট বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ব্রিটিশরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে এবং আলেমায়েহুর দেহের প্রত্যাবর্তন হবে।