ঢাকা প্রেস
নড়াইল প্রতিনিধি:-
নড়াইলের মৃৎশিল্প: আধুনিকতার আঘাতেও টিকে আছে প্রাচীন ঐতিহ্য
আধুনিক যুগের প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের আগ্রাসনে সারাদেশে কুমারশিল্প ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের নড়াইল জেলায় এই প্রাচীন কারিগরি এখনও জীবিত। চন্ডিতলা ও লোহাগড়া উপজেলার কুমারডাঙ্গা গ্রামসহ জেলার অন্তত ১৫টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক কারখানায় হাজার হাজার মানুষ মাটির হরেক রকমের জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য
নড়াইল সদরের ভদ্রবিলা ইউনিয়নের চিত্রা নদীর পাড়ে অবস্থিত চন্ডিতলা গ্রামের কুমারদের ইতিহাস শতাব্দী প্রাচীন। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের জীবনই গড়ে উঠেছে এই মৃৎশিল্পের চারপাশে। বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই পেশা এখনও অনেকের কাছে অর্থ উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম।
কঠিন পরিশ্রম ও সংগ্রাম
কুমারদের জীবন কঠিন পরিশ্রমের। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের কাজ। মাটিতে পানি মিশিয়ে কাঁদা তৈরি করা, তা দিয়ে বিভিন্ন আকারের পাত্র তৈরি করা, রোদে শুকানো এবং পরে চুলায় পোড়ানো—এই সমস্ত কাজই তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ।
চাহিদা কমছে, সংকট বাড়ছে
যদিও এখানকার কুমারদের তৈরি মাটির পাত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, তবে আধুনিক যুগের প্রভাব এই শিল্পকেও ছুঁয়েছে। প্লাস্টিক ও সিরামিকের দাপটে মাটির পাত্রের চাহিদা কমে যাওয়ায় কুমাররা আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ছেন। আগের মতো আর প্রচুর আয় হয় না।
নতুন প্রজন্মের অনীহা
অন্যদিকে, নতুন প্রজন্ম এই পেশাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা অন্য কোনো পেশায় যোগ দিতে চায়। ফলে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিসিকের ভূমিকা
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) এই শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে থাকে। তবে বাজারের প্রতিযোগিতা ও আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কুমারদের জন্য আরো বেশি সহায়তা প্রয়োজন।
নড়াইলের মৃৎশিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমাদের এই প্রাচীন কারিগরিকে সম্মান জানাতে হবে এবং নতুন প্রজন্মকে এই শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।