জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে, যেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দল, ছাত্র-শ্রমিক, ওলামায়ে কেরাম, লেখক, চিন্তক এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ইফতার মাহফিলে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তাঁর পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসে বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে তিনি সংসদ এবং গণপরিষদ নির্বাচন একইসঙ্গে আয়োজনের দাবি জানান। তিনি উল্লেখ করেন, এর মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে। তবে নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি সরকারকে সন্ত্রাস, দখল, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এনসিপি প্রধান বলেন, "মতপার্থক্য ও নীতিগত বিরোধ থাকতে পারে, তবে গণতান্ত্রিক সংলাপ ও মিথস্ক্রিয়া যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। জাতীয় ঐক্য ছাড়া ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করা সম্ভব নয়।" তিনি সতর্ক করে বলেন, "বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র এখনও চলছে, আর রাজনীতিবিদদের বিভক্তি এবং সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, মাফিয়া চক্র, ব্যবসায়ী শ্রেণি ও বৈদেশিক শক্তির ষড়যন্ত্র জাতীয় স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।" তিনি বলেন, জুলাইয়ে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা থেকে পিছু হটা উচিত হবে না।
নাহিদ ইসলাম জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সংস্কার প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে, তাদের প্রস্তাবিত জুলাই সনদ দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এতে দেশের প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক জনপ্রশাসন ও পুলিশের সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। নারীর প্রতি সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
এই ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলী আশরাফ আকন, গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছিরউদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক সিগবাতুল্লাহ, চিন্তক ফরহাদ মজহার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, মাসুদ কামালসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এনসিপি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠলেও, দলটির ইফতার মাহফিলে সরকারের কোনো প্রতিনিধি বা উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন না। তবে, জাতীয় নাগরিক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, সদস্য সচিব জাহিদ আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, লেখক মূসা আল হাফিজ, ধর্মীয় আলোচক হাবিবুর রহমান মিসবাহ, এবং গুম হওয়া সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান ইফতারে অংশ নেন।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটোয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এবং সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও নাহিদ সারওয়ারসহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।