হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধে অস্থিরতা তৈরির শঙ্কা বিশ্ব অর্থনীতিতে
প্রকাশকালঃ
১২ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ ১৮৯ বার পঠিত
সামরিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন অবরুদ্ধ গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে হামলা এবং ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার। তাদের আশঙ্কা এ হামলার পারদ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। এতে জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি জোরালো হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে এবং অর্থনীতিতে আস্থা কমে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে। গত সোমবার বিশ্ববাজারে জ্বালানি প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে তেলের দাম এবং দরপতন ঘটেছে বড় বড় শেয়ারবাজারে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ২০ মাস আগে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ব যখন ভুগছে, তখন ফিলিস্তিনে নতুন করে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়া পুরো বিশ্বকেই বেকায়দায় ফেলে দেবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে নতুন করে পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। তবে পুরো বিষয় নির্ভর করছে যুদ্ধ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং কতটা ছড়িয়ে পড়ে তার ওপর।
নর্দান ট্রাস্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ কার্ল টানেনবাম বলেন, ‘অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ঘটে, ঝুঁকির পরিমাণ বাড়ে এবং বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো সংঘাত জ্বালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে। ফলে তেলের দাম কোন দিকে যায় সেটিও দেখার বিষয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে অস্থিতিশীলতায় থাকা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে এ সংঘাত ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। পরিস্থিতি যেদিকে যাবে, বাজারও সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’ বিশ্বনেতারা এ সপ্তাহে মরক্কোতে বসছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের এ বৈঠকে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ও বিধি-নিষেধ নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে তাতে নিশ্চিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের এ সংঘাতও আলোচনায় থাকবে। এ অঞ্চলে সৌদি আরব, ইরান ও কাতারের মতো শীর্ষ জ্বালনি উৎপাদক দেশগুলোই শুধু অবস্থান করছে না, সেই সঙ্গে সুয়েজ খালের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথও রয়েছে। ফলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরবে।
থ্রি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারিম বাস্তা বলেন, ‘এ যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে পারে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ঝুঁকি ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।’
ইতিপূর্বে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার কারণে বিশ্ব অস্থির হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি; উত্তর ও দক্ষিণ এবং পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বিভক্তি গভীরতর হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, “বৈশ্বিক ব্যবস্থা এমন এক সময়ে ‘পশ্চাৎপদ অবস্থান’ নিয়েছে, যখন শক্তিশালী, আধুনিক ও বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আগের চেয়ে বেশি প্রয়োজন রয়েছে। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বকে তার মতো করে প্রতিনিধিত্ব না করে, তাহলে আমরা কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারি না। সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে, প্রতিষ্ঠানগুলো সমস্যার অংশ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।”
এদিকে এ বছর বিশ্ব প্রবৃদ্ধি কমবে বলে এক পূর্বাভাস জানিয়েছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আংকটাড। সংস্থার মতে, অসম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণের বোঝার কারণে প্রবৃদ্ধি অর্জনে চাপ তৈরি হবে। ২০২৩ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হবে ২.৪ শতাংশ, যা বিশ্ব অর্থনীতি মন্দামুখী হওয়ার একটি প্রমাণ। ২০২২ সালে বিশ্ব প্রবৃদ্ধি হয় ৩ শতাংশ। পূর্ব ও মধ্য এশিয়া ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলেই এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি কমবে ইউরোপের।