
যুক্তরাষ্ট্র, ভেনেজুয়েলা, জাপান, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, চীন, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার ও ভারত—এই সব দেশ বারবার ভূমিকম্পের আঘাত পায়। ফলে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় থাকুন না কেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি সব সময় থাকে। তবে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় থাকার মানে এই নয় যে, প্রতিদিনই ঝুঁকি আসবে। সতর্কতা এবং প্রস্তুতি অপরিহার্য।
জাপান ও ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। জাপান “প্যাসিফিক রিং অব ফায়ার”-এর অংশ, যেখানে টেকটোনিক প্লেটের সক্রিয়তার কারণে ঝুঁকি অনেক বেশি। ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি বছর প্রায়ই ৬.০ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
১৯২৩ সালে জাপানে ৭.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারান, হাজার হাজার ভবন ধ্বংস হয়। এর পর শহুরে এলাকায় ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সংক্রান্ত নীতি চালু হয়। ১৯৮১ সালে নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়, যেখানে শুধু নির্মাণ নির্দেশনা নয়, ভবন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে তাও নির্ধারণ করা হয়। প্রকৌশলী কিথ পোর্টার বলেন, মূল লক্ষ্য হলো জীবন বাঁচানো, কাঠামোগত অখণ্ডতা নয়।
জাপানে ভবনগুলোকে কম্পন সহনশীল করতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
পিলার, বিম ও প্রাচীর শক্তিশালী করা: মাটির কম্পন সহ্য করার জন্য।
রাবারের প্যাড বা বেস আইসোলেশন সিস্টেম: ভবনকে মাটির সরাসরি কম্পনের ধাক্কা থেকে রক্ষা করে।
তবে কোনো প্রযুক্তি পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। বিশেষ করে “লিকুইফেকশন জোন”-এর মতো এলাকায় মাটির ঘনত্ব কমে ধসের ঝুঁকি থাকে।
ইন্দোনেশিয়ায় ২০০৪ সালের সুনামির পর ৬৫৫ মিলিয়ন ডলার তহবিলের মাধ্যমে ২০,০০০’র বেশি দুর্যোগ সহনশীল বাড়ি নির্মাণ করা হয়।
ঢাকা শহরের ভূমিকম্প ঝুঁকি দীর্ঘদিনের আলোচ্য বিষয়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৩ সালে ঢাকার অবস্থান ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় ২০তম হিসেবে দেখিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ৪৮৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, ঢাকা ও আশপাশে ঐতিহাসিকভাবে মাত্র ছয়টি ভূমিকম্প হলেও গত ১২ বছরে সংখ্যা বেড়ে দশে দাঁড়িয়েছে।
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার কংক্রিট ভবনের ৫৬.২৬% উচ্চ ঝুঁকিতে, আর ৩৬.৮৭% মাঝারি ঝুঁকিতে। রিখটার স্কেলে ৪ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে এসব ভবন ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
আরসিসি (রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট) ভবনগুলোতে কলামের নিচে থাকা নিরাপদ।
সিঁড়ি হলো ভবনের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ, ভূমিকম্পে সেখানে দাঁড়ানো নিরাপদ।
ফাটল থাকা ভবন থেকে মজবুত ও নিরাপদ ভবনে স্থানান্তর।
জাপানে নাগরিক মহড়া ও নিরাপদ স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা দৈনন্দিন রুটিনের অংশ। ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামির পর প্রস্তুতিমূলক শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা শহরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না থাকলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিণতি এড়ানো কঠিন। তবে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।