শ্রীলঙ্কায় বিশেষ সংবর্ধনা ও সম্মাননা দেওয়া হয় বাংলাদেশি আলেমকে

প্রকাশকালঃ ১৫ জুলাই ২০২৪ ০১:০২ অপরাহ্ণ ৫৮৬ বার পঠিত
শ্রীলঙ্কায় বিশেষ সংবর্ধনা ও সম্মাননা দেওয়া হয় বাংলাদেশি আলেমকে

শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া নাজিমিয়ার প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের ১০তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রবীণ আলেম মাওলানা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কাউসার। অনুষ্ঠানের আগে তাঁকে বিশেষ সংবর্ধনা ও সম্মাননা দেওয়া হয়। গত ৩০ জুন দেশটির বেরুওয়ালায় অবস্থিত জামিয়ার ক্যাম্পাস অডিটরিয়াম হলে তা অনুষ্ঠিত হয়।


মাওলানা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কাউসার দীর্ঘ ২৩ বছর জামিয়া নাজিমিয়ার উপ-পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মা‘আরিফ আল-ইসলামিয়ার শিক্ষা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জানা যায়, সাধারণসভার উদ্বোধনী পর্বে জামিয়া নাজিমিয়ার সাবেক উপ-পরিচালক মাওলানা শহীদুল্লাহ কাউসারকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। এ সময় তাঁর জীবন ও অবদান নিয়ে তৈরি একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করা হয়। এরপর মূলবক্তব্য উপস্থাপন করেন তিনি।


এ সময় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সভাপতি শায়খ লাফির মাদানি। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নাজিমিয়া ইনস্টিটিউট ইসলামিক স্টাডিজের প্রধান আলহাজ ইয়াকুত নালিম, জামিয়া নাজিমিয়ার রেক্টর শায়খ আগার মুহাম্মদ ও শায়খ আবদুর রাজ্জাক। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া নাজিমিয়া শ্রীলঙ্কার মুসলিম শিক্ষার ইতিহাসে একটি মাইলক।


ইসলামী জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি আধুনিক বিষয়ে পাণ্ডিত্ব অর্জন করতে আলহাজ এমআইএম নাজিম তৎকালীন বিশ্বখ্যাত আলেমদের পরামর্শে তা প্রতিষ্ঠান করেন। মূলত তিনি এ ধরনের আধুনিক ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন বিংশ শতাব্দির বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাবিদ মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) লিখিত ‘The New Menace and Its Answer’ নামক একটি গ্রন্থ থেকে।

 

এ গ্রন্থে আধুনিক যুগে উত্তম চরিত্রের অধিকারী আলেম সমাজ তৈরির লক্ষ্যে মুসলিম উম্মাহর আদর্শিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। মাওলানা মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কাউসার ১৯৫৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হাফেজ ফকির আহমেদ ও মাতা সালেহা খাতুনের ৮ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় তিনি।


সম্ভ্রান্ত ধার্মিক পরিবারে বেড়ে ওঠায় মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআন হিফজ  সম্পন্ন করেন। তাঁর চাচা মাওলানা আবদুল মান্নান (রহ.) প্রতিষ্ঠিত বাহাদাদিয়া নুরুল উলুম মাদরাসায় তাঁর প্রাতিষ্ঠানি পড়াশোনা শুরু হয়। এরপর চট্টগ্রামে মেখলে মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহ.) প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় পড়াশোনা করেন তিনি। এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে পাকিস্তানের জামিয়া ফারুকিয়া করাচিতে ও পরবর্তীতে আল-জামিয়া আল-আলামিয়্যা আল-ইসলামিয়্যায় পড়েন।  


পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ইসলামিক সেন্টার করাচিতে ইমাম ও আরবি ভাষার শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ইসলামিক মিশনস প্রতিষ্ঠিত আল-জামিয়া আল-আলামিয়্যা আল-ইসলামিয়্যায় দীর্ঘ সাত বছর (১৯৭২-১৯৭৮) পড়াশোনা করেন। এসময় তিনি প্রতিযোগিতাপূর্ণ শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন এবং দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থী থাকার কারণে সেখানে তখন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিরাজ করত। পাশাপাশি তিনি করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ ও এমএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। 

 

১৯৭৮ সালে মাওলানা শহীদুল্লাহ কাউসার ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে ঘানা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। ওই সময় শ্রীলঙ্কার জামিয়া নাজিমিয়্যার প্রতিষ্ঠাতা হাজি নাজিমসহ একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয়। তাঁরা ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষায় পাণ্ডিত্ব অর্জনকারী কাউকে খুঁজছিলেন। ওই প্রতিনিধি দল তাঁকে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জামিয়া নাজিমিয়্যায় যোগ দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি সেখানে যান এবং জামিয়ার উপ-পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 

 

মূলত সেখানে তিনি শিক্ষকতার দায়িত্বের পাশাপাশি প্রশাসন ও কারিকুলাম প্রণয়নসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষত প্রতিষ্ঠানটির প্রথম সমাবর্তন আয়োজনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি, ড. ইউসুফ আল-কারদাভি, শায়খ মুহাম্মদ আল-গাজালিসহ তৎকালীন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্বদের তিনি আমন্ত্রণ জানালে তাঁরা সবাই এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। জামিয়া নাজিমিয়্যার ইতিহাসে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে অনবদ্য অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিখ্যাত এ প্রতিষ্ঠানে তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর দায়িত্ব পালন করেন।