প্রকাশকালঃ
২৮ মে ২০২৩ ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ ২১০ বার পঠিত
কলব মানে অন্তর বা হৃদয় মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে। কলব যদি ভালো হয়, তাহলে তা মানুষকে ভালো পথে পরিচালিত করে, আর যদি মন্দ হয় তাকে খারাপের দিকে টেনে নিয়ে যায়। হাদিসে এসেছে, নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘জেনে রাখো! দেহের মধ্যে এক টুকরা গোশত আছে। যখন তা সুস্থ থাকে তখন সমস্ত শরীরই সুস্থ থাকে।
আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন সমস্ত শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। স্মরণ রেখো, তা হলো কলব (হৃদয়)।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৯৪৯)
কোরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় কলবের বা অন্তরের কথা বর্ণনা করেছেন। এগুলো দুই ভাগে বিভক্ত।
কিছু আয়াতে ভালো অন্তরের কথা বলা হয়েছে। আর কিছু আয়াতে মন্দ কলবের কথা বলা হয়েছে। নিম্নে আমরা উভয় প্রকার কলব নিয়ে আলোচনা করব। আর আমরা দেখে নেব আমাদের কলব কোন ধরনের বা কাদের অন্তর্ভুক্ত।
বিনম্র অন্তর : যে অন্তর আল্লাহ তাআলার প্রতি পূর্ণরূপে অর্পিত। আল্লাহর বিধি-বিধানে পূর্ণরূপে বিশ্বাসী। আর সে অন্তর শয়তানের কুমন্ত্রণায় কর্ণপাত করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তারা যেন জেনে নেয় এটাই (অর্থাৎ এ কালামই) সত্য, যা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে অতঃপর তারা যেন তাতে ঈমান আনে এবং তাদের অন্তর তার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের জন্য সরল পথের হিদায়াতদাতা।’( সুরা : হজ, আয়াত : ৫৪)
সুস্থ হৃদয় : যে অন্তর সব ধরনের খারাপি থেকে সুস্থ। সব ধরনের কুফর-শিরক ও বিদাত থেকে পবিত্র। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে সুস্থ মন নিয়ে সে মুক্তি পাবে।’ (সুরা : শুআরা আয়াত : ৮৯)
আল্লাহমুখী হৃদয় : শয়নে-স্বপনে সংগোপনে, সর্বাবস্থায় যে হৃদয় আল্লাহর প্রতি অভিমুখী আল্লাহকে স্মরণ করে। কোনো গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে ফিরে আসে আনুগত্যের দিকে। আল্লাহ বলেন, ‘যে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে তাঁকে না দেখেই এবং আল্লাহর দিকে বিনীত অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়।’ (সুরা : কাফ, আয়াত : ৩৩)
ভীতসন্ত্রস্ত অন্তর : যে হৃদয় আল্লাহর ভয়ে সর্বদা ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। অল্পস্বল্প যেসব আমল করা হয়, তার ব্যাপারে ভয় থাকে যে আল্লাহ কবুল করবেন কি না। আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা যেকোনো কাজই করে তা করার সময় তাদের অন্তর এই ভয়ে ভীত থাকে যে তাদের নিজ প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৬০)
মুত্তাকি অন্তর : যে হৃদয় আল্লাহর ভয়ে সর্বদা তাকওয়ার পথে চলে। আল্লাহ বলেন, ‘এসব বিষয় স্মরণ রেখো আর কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলিকে সম্মান করলে এটা অন্তরস্থ তাকওয়া থেকেই অর্জিত হয়।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৩২)
প্রশান্ত হৃদয় : যে অন্তর একমাত্র আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে, প্রশান্তি অনুভব করে আর পুলকিত হয়। যখনই আল্লাহর জিকির করে তার হৃদয় শান্তি ও প্রশান্ত হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘এরা সেই সব লোক, যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের অন্তর আল্লাহর জিকিরে প্রশান্তি লাভ করে। স্মরণ রেখো! শুধু আল্লাহর জিকিরেই প্রশান্তি লাভ হয়।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)
হিদায়াতপ্রাপ্ত অন্তর : যে অন্তর আল্লাহর পথে পরিচালিত। নিশ্চিন্ত মনে সব কিছু আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেয়। আল্লাহর সব কিছুতে সন্তুষ্ট থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো মুসিবত আল্লাহর হুকুম ছাড়া আসে না। যে কেউ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, আল্লাহ তার অন্তরকে হিদায়াত দান করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞাত।’ (সুরা : তাগাবুন, আয়াত : ১১)
জীবন্ত হৃদয় : সদা সজাগ ও সচল থাকে আল্লাহর নিদর্শনাবলি উপলব্ধি করে। কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই এর ভেতর এমন ব্যক্তির জন্য উপদেশ রয়েছে, যার আছে অন্তর কিংবা যে মনোযোগ দিয়ে কর্ণপাত করে।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ৩৭)
অসুস্থ হৃদয় : যে হৃদয়ে নানা সন্দেহের দানা বাসা বেঁধে আছে, পাপাচার আর প্রভৃতির অনুসরণে মরিয়া যে অন্তর তা অসুস্থ। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবীপত্নীরা, তোমরা সাধারণ নারীদের মতো নও, যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। সুতরাং তোমরা কোমল কণ্ঠে কথা বোলো না—পাছে অন্তরে বেঁধে আছে এমন ব্যক্তি লালায়িত হয়ে পড়ে আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২)
অন্ধ হৃদয় : যে হৃদয় ভালো-মন্দ নিরূপণ করতে পারে না। সব কিছু স্পষ্ট হলেও সে থাকে অন্ধের মতো। আল্লাহ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ হয় না; বরং অন্ধ হয় সেই হৃদয়, যা বক্ষদেশে বিরাজ করে। (সুরা : হজ, আয়াত : ৪৬)
উদাসীন হৃদয় : আল্লাহ তাআলার বিভিন্ন বিধানের ব্যাপারে উদাসীন। অন্যদিকে দুনিয়ার প্রতি সদা সজাগ। প্রবৃত্তির অনুসরণে মত্ত। কিন্তু সত্য গ্রহণে উদাসীন। আল্লাহ বলেন, ‘এমন কোনো ব্যক্তির কথা মানবে না, যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফিল করে রেখেছি, যে নিজ খেয়াল-খুশির পেছনে পড়ে রয়েছে এবং যার কার্যকলাপ সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ২৮)
অহংকারী অন্তর : যার ভেতর অহংকারে পরিপূর্ণ। অহংকারের কারণে সে ভালো জিনিসের অনুসরণ করতে পারে না। এমনকি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য তার জন্য অহংকার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। নিজেকে প্রবল ক্ষমতাধর মনে করে। আল্লাহ বলেন, ‘এভাবেই আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তির অন্তরে মহর মেরে দেন।’ (সুরা : গাফের, আয়াত : ৩৫)
কঠোর অন্তর : যে অন্তরে কোনো ধরনের দয়ার লেশমাত্র নেই। কারো দুঃখে তার অন্তর ব্যথিত হয় না। আল্লাহ বলেন, ‘আপনি যদি রূঢ় প্রকৃতির ও কঠোর হৃদয়ের হতেন তাহলে তারা আপনার আশপাশ থেকে সরে যেত।’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
মহরকৃত অন্তর : যে অন্তরে মহর মেরে দেওয়া হয়েছে, সে হিদায়াতের কথা শুনে না। আর শুনলেও তার জীবন পরিবর্তন হয় না। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন।’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ১৩)
বাঁকা অন্তর : যে হৃদয়ে কখনো ভালো জিনিস বা ভালো পথ দেখে না। সত্যটা সামনে এলেও সে বাঁকা পথে চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আল্লাহ বলেন, ‘যাদের অন্তরে বক্রতা আছে তারা মুতাশাবিহ (ব্যাখ্যাসাপেক্ষ) আয়াতের পেছনে পড়ে থাকে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭)
সন্দিহান অন্তর : যে অন্তরে সন্দেহের বাসা বেঁধে আছে। তার অন্তর সব সময় সন্দেহের মাঝে ঘুরপাক খেতে থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার কাছে (জিহাদ না করার) অনুমতি চায় তো তারা, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং তাদের অন্তর সন্দেহে নিপতিত এবং তারা নিজেদের সন্দেহের ভেতর দোদুল্যমান।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৪৫)