প্রকাশকালঃ
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:১৫ অপরাহ্ণ ২১১ বার পঠিত
মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত্র সিরাত নামে পরিচিত। হাদিস সংকলন শুরু হওয়ার পর রাসুল (সা.)-এর সিরাত এবং তাঁর সব সামরিক অভিযান আখ্যানের সুবিন্যস্ত সংকলনের কাজ শুরু হয়। উরওয়াহ ইবনে জুবায়ের (মৃত্যু-৯২ হিজরি), অতঃপর আব্বান ইবনে উসমান (মৃ. ১০৫ হিজরি), ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ (মৃ. ১১০ হিজরি), শুরাহবিল ইবনে সাদ (মৃ. ১২৩ হিজরি) ও ইবনে শিহাব আজ জুহরি (মৃ. ১২৪ হিজরি) সর্বপ্রথম সিরাত বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। এই মনীষীরা সর্বপ্রথম সিরাত সংকলনের সৌভাগ্য লাভ করেন।
তাঁদের গ্রন্থগুলো সিরাতশাস্ত্রের প্রথম উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। নিচে তাঁদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো :
উরওয়া ইবনে জুবায়ের (রহ.)
বিখ্যাস তাবেঈ, প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফকিহ উরওয়া ইবনে জুবায়ের (রা.) ২৩ হিজরিতে ওসমান (রা.)-এর খিলাফতকালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন প্রসিদ্ধ সাহাবি জুবায়ের বিন আওয়াম ও আবু বকর তনয়া আসমা (রা.)-এর পুত্র। বহু সাহাবি তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।
সাহাবিদের মধ্যে ফকিহ হিসেবে খ্যাত আলী ইবনে আবি তালিব, জায়েদ ইবনে সাবিত, নুমান ইবনে বশিরের শিষ্যত্ব তাঁর চোখে উন্মোচন করে ফিকহের বিশাল জগৎ। এই মহান ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য-সৌরভ তাঁর জ্ঞান উদ্যান সুরভিত ও সুশোভিত করে। মদিনার নিকটবর্তী মাজাহ পল্লীতে ৯৪ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন এই মহান মনীষী।
আব্বান ইবনে উসমান (রহ.)
তিনি তৃতীয় খলিফা ওসমান ইবনে আফফানের পুত্র। হিজরির ২০তম বছরে মদিনার বিশুদ্ধতম পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর পিতা ও অন্য বড় সাহাবি থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। ফিকহ ও হাদিস শাস্ত্রে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। মাগাজি ও সিরাত শাস্ত্রের সুখ্যাতি ছিল তুঙ্গস্পর্শী। মুহাম্মদ বিন মুসলিম বিন শিহাব আয জুহরি ও মুহাম্মদ বিন ইসহাকসহ অনেক বড় মুহাদ্দিস ও ফকিহরা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ধন্য হয়েছেন।
সর্বাধিক সম্ভাব্য মত অনুযায়ী, তিনি ইয়াজিদ ইবনে আবদ আল-মালিক ইবনে মারওয়ানের খিলাফতে ১০২ থেকে ১০৫ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন ।
ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ (রহ.)
ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহকে কিতাবুল মাগাজি এবং কিতাবুস সিয়ার সংকলকদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির সংকলকদের কাতারে গণ্য করা হয়। তিনি ইয়েমেনের রাজধানী সানআর জুম্মার নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাগাজি-সিরাত সংকলনে তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি আবু হুরায়রা, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনে আল-খাত্তাব, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবু সাঈদ আল-খুদরি, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ প্রমুখ সাহাবি থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাঁর জ্ঞান ভাণ্ডারে ছিল আহলে কিতাবের জ্ঞান প্রাচুর্য-ঐশ্বর্য। ১১০ হিজরিতে এই মহাসাধকের প্রস্থান হয়।
শুরাহবিল ইবনে সাদ (রহ.)
তিনি মদিনায় সুরভিত সুস্নিগ্ধ পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। জায়িদ বিন সাবিত, আবু হুরায়রা, আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) এবং অন্যান্য প্রবীণ সাহাবি থেকে হাদিস শ্রবণ করে নিজের ভেতরকে দীপিত করেন। শুরাহবিল মদিনায় হিজরতকারী সাহাবি এবং বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের নামের তালিকা করেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে সুফিয়ান ইবনে উয়ায়নাহ (রহ.)-এর ভাষ্য, মাগাজি ও বদরি সাহাবিদের সম্পর্কে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিলেন না। তিনি ১২৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।
ইবনে শিহাব আজ জুহরি (রহ.)
হিজরি প্রথম শতাব্দীর কিংবদন্তি পথিকৃত তাবেঈ ইমাম জুহরি (রহ.) ৫১ হিজরিতে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মুসলিমের বংশলতিকা কুরাইশ বংশের বনু জুহরা ধারার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর সাথি ও সহযোদ্ধা ছিলেন। পিতামহ ইবনে শিহাব বনু জুহরা ধারার সন্তান হওয়ায় ইমাম জুহরি বিখ্যাত হয়ে উঠেন ইবনে শিহাব জুহরি নামে। শৈশবেই পিতার স্নেহ হারান ইমাম জুহরি। তিনি সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.), সাহল ইবনে সাদ (রা.), সায়্যিদুত তাবেয়িন সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.)-সহ শীর্ষস্থানীয় অনেক তাবেঈর শিষ্য। আতা ইবনে আবি রাবাহ, আমর ইবনে দিনার, ইমাম আজম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ).-সহ অনেক মহান মনীষী তাঁর ছাত্র।
ইমাম ইবনে শিহাব জুহরি হাদিস সংকলনের অগ্রপথিক। মাগাজির বরিত ইমাম। খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রহ.)-এর শাসনামলে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সর্বপ্রথম হাদিস সংকলন করেন তিনি। তিনি ‘আলামুল হুফ্ফাজ’ নামে সুবিদিত ছিলেন।
ইমাম ইবনে শিহাব জুহরি ১২৪ হিজরিতে শাম ও ফিলিস্তিনের মাঝামাঝি সীমান্তবর্তী এক গ্রামে ইন্তেকাল করেন। তাঁর জীবনের দশ দিগন্ত নিয়ে মিসরের ড. মুস্তফা আস সিবায়ী ‘আস সুন্নাহ ওয়া মাকানাতুহা ফিত তাশরিয়ীল ইসলামী’ নামক গ্রন্থে আলোচনা করেন। ইমাম জুহরির জীবনের ওপর প্রাচ্যবিদদের আরোপিত বিভিন্ন অপপ্রচার ও মিথ্যা অভিযোগের অসারতা তুলে ধরেছেন।