কুমিল্লার মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে এক নারীর সঙ্গে তার ছেলে ও মেয়েকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০–২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিহত রোকসানা আক্তার রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে শুক্রবার (৪ জুলাই) গভীর রাতে বাঙ্গরা বাজার থানায় এ হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শনিবার সকালে বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীও অভিযান পরিচালনা করছে। শুক্রবার রাতে কড়ইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মো. সাবির আহমেদ (৪৮) ও মো. নাজিম উদ্দীন বাবুল (৫৬) নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কড়ইবাড়ি গ্রামে একদল উগ্র জনতা ‘মাদক ব্যবসা’ ও ‘মোবাইল চুরির’ অভিযোগ তুলে রোকসানা আক্তার রুবি, তার ছেলে রাসেল মিয়া ও মেয়ে জোনাকি আক্তারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রাতে স্থানীয় কবরস্থানে তিনজনকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কড়ইবাড়িসহ আশপাশের গ্রামগুলো অনেকটা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
মামলার বাদী রিক্তা আক্তার বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চাই। পরে আমি দুই সন্তান নিয়ে পাশের দুটি বাড়িতে আশ্রয়ের চেষ্টা করি। কিন্তু সেখান থেকেও আমাকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে বাড়ির পাশের একটি টয়লেটের ট্যাংকি। সেখানেই সন্তানদের নিয়ে লুকিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই। না হলে ওরাও আমাকে মেরে ফেলতো।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘চেয়ারম্যানের ইন্ধনেই আমার মা, ভাই আর বোনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিচার চাই, নিরাপত্তা চাই। ওরা গ্রেপ্তার না হলে আমাদেরও বাঁচতে দেবে না।’’
ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘‘ঘটনার সঙ্গে যারা প্রকৃতভাবে জড়িত, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ঢালাওভাবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।’’