যে নিয়মের মারপ্যাঁচে ও বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ে হেরেছে বাংলাদেশ

প্রকাশকালঃ ১১ জুন ২০২৪ ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ ৬৮৩ বার পঠিত
যে নিয়মের মারপ্যাঁচে ও বিতর্কিত আম্পায়ারিংয়ে হেরেছে বাংলাদেশ

গতকাল সোমবার (১০ জুন) নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে ৪ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষের দিকে ব্যাটাররা বাউন্ডারি মারতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি আম্পায়ারের কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ম্যাচটিকে বাংলাদেশের হাতের নাগালের বাইরে নিয়ে যায়।

নাসাউ কাউন্টির ড্রপইন পিচে আগের দিন ভারতের দেয়া ১১৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। হারে মাত্র ৬ রানে। সেদিনই বোঝা যাচ্ছিল এই মাঠে রান তাড়া করা কতটা কঠিন। বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেও বিষয়টি মাথায় রেখেছিল দুই দল। তাই তো টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে বাংলাদেশি পেসাররা দুর্দান্ত নৈপুণ্যে মাত্র ১১৩ রানেই আটকে রাখে প্রোটিয়াদের। জবাব দিতে নেমে ৫০ রানে ৪ উইকেট হারালেও তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ম্যাচে ফেরে টাইগাররা। ৪৪ রানের জুটি গড়েন তারা।

১৭তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে রিয়াদকে স্ট্রাইক দেন তাওহীদ। আর সেখানেই ঘটনার সূত্রপাত।

ওটেনিল বার্টমানের ওভারের দ্বিতীয় বলটিতে ফ্লিক করেছিলেন রিয়াদ। কিন্তু বল তার পায়ে লেগে থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে বাউন্ডারি হয়ে যায়। এদিকে প্রোটিয়ারা এলবিডাব্লিউয়ের আবেদন করলে সে ডাকে সাড়া দেন আম্পায়ার। অথচ খালি চোখে টিভি পর্দাতেও মনে হচ্ছিল বল লেগ স্টাম্পে পড়ে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছিল। রিভিউ নিয়ে রিয়াদ প্রাণ ফিরে পেলেও বাউন্ডারি আর বাংলাদেশের রানের খাতায় যোগ হয়নি। কারণ ততক্ষণে বলটি 'ডেডবল' ঘোষিত হয়ে গেছে। আর ম্যাচের শেষে সেই ৪ রানই জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। তাই এই ডেডবলের নিয়ম নিয়ে চলছে তুমুল তর্কবিতর্ক।

আইসিসির প্লেয়িং কন্ডিশনের অ্যাপেন্ডিক্স ডি'র ৩.৭ ধারায় ডিআরএস অবস্থার ডেডবলের নীতি অনুযায়ী, যদি একজন খেলোয়াড় রিভিউয়ের আবেদন জানান, যেখানে ওরিজিনাল ডিসিশন (আম্পায়ার্স কল) আউট থেকে বদলে নটআউট হয়, তবে বলটি তখনও ডেডবল বলে বিবেচিত হবে যখন প্রথম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল তখনকার মতোই।'

বাংলাদেশের হারের পর ডেডবলের এই নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ প্রাপ্য ৪ রান থেকে বঞ্চিত তো হয়েছেই, সেই বলটিও ডটবল হিসেবেই গণনায় ধরা হয়েছে। যা ম্যাচের ক্রুসিয়াল মুহূর্তে বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই বলটিতে ৪ রান বাংলাদেশের খাতায় যোগ হলে বল ও রানের ব্যবধান সমান হয়ে যেত।

এদিন অবশ্য শুধু এই একটি সিদ্ধান্তই নয়, বরং আম্পায়ারের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আর এর সব কয়টিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেই ওভারের পরের ওভারেই ফের অবাক করা ঘটনা ঘটান আম্পায়ার। রাবাদার করা ১৮তম অভারের প্রথম বলটি হৃদয়ের পায়ে লাগলে দক্ষিণ আফ্রিকা ঠিকমত আবেদন না করতেই আঙুল তুলে আউট দিয়ে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলে দেখা যায় বল আউটসাইড অফস্টাম্পে পিচ হয়ে লেগ স্টাম্পের বেলে কোনোমতে আঘাত করছে। আম্পায়ার্স কলে আউট না দেয়া হলে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা রিভিউ নিলে এই সিদ্ধান্তটা বাংলাদেশের পক্ষেই আসত। এমনকি হৃদয়ের আউটে ডিআরএসে ম্যানিপুলেশনের অভিযোগও তুলছেন কেউ কেউ। এর বাইরে দুটি নিশ্চিত ওয়াইড বলও আম্পায়ার বৈধ বল বলে ঘোষণা করেন।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাওহীদ হৃদয়ও বাজে আম্পায়ারিংয়ের বিষয়টি তুলে আনেন। আম্পায়ারিংকে হারের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি। হৃদয় বলেন, তাওহীদ হৃদয় বলেন, 'সত্যি বলতে, সেটি ভালো সিদ্ধান্ত ছিল না। আঁটসাট ম্যাচে আমাদের জন্য ভালো কিছু ছিল না সেটি। আমার মতে… আম্পায়ার আউট দিয়েছেন, তবে আমাদের জন্য কঠিন ছিল। ওই চারটি রান পেলে ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হতে পারত। আর কিছু বলার নেই…।'

ক্রিকেট প্রেমীরাও মনে করেন এইরকম আম্পায়ারিং ক্রিকেট আইসিসিকে প্রাশ্নবিদ্ধ করে। কিছু নিয়মের মধ্যে পরিবর্তন আনা দরকার। এলবিডব্লিউর ক্ষেত্রে আম্পায়ার্স কলকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া খুবই প্রশ্নবিদ্ধ; যার মাধ্যমে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে।