ঢাকাসহ সারা দেশে ‘দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কতে যাচ্ছে বিএনপি
প্রকাশকালঃ
০৫ জুন ২০২৪ ০৩:৪৫ অপরাহ্ণ ১২৬ বার পঠিত
সাবেক সেনাপ্রধান ও সাবেক পুলিশপ্রধানের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। আলোচিত ওই দুই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাসহ সারা দেশে ‘দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করার কথা ভাবছে বিএনপি। এর আগে সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দুর্নীতির বিষয় জনগণকে জানাতে সারা দেশে লিফলেট বিতরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে নানামুখী আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দুই বাহিনীর সাবেক দুই শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ এবং এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান ও কৌশল বিশ্লেষণ করেছেন। একই সঙ্গে বৈঠকে সরকারসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং মন্ত্রী-এমপি ও ক্ষমতাসীন নেতাদের দুর্নীতি নিয়ে লিফলেট বিতরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকায় দুর্নীতিবিরোধী সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, জেলায় জেলায় মানববন্ধন করার প্রস্তাবও এসেছে।
ঈদের পর সমাবেশসহ কয়েকটি কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে ভাবছেন দলের নেতারা। বৈঠক সূত্র জানায়, গণমাধ্যমে আজিজ আহমেদ ও বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বড় ধরনের অভিযোগ তুললে সরকার অন্য সময়ের মতো কেন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন নেতা। বৈঠকে নেতারা বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে সরকার এতটা সহনশীল কখনোই ছিল না।
নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, আজিজ ও বেনজীর ইস্যুর আড়ালে সরকার হয়তো ভিন্ন কোনো বড় ধরনের কাজ করছে। হয়তো সরকার অর্থনীতিসহ অন্য কোনো বড় চাপে বেসামাল আছে, যা প্রকাশ করতে চাইছে না বলে আজিজ-বেনজীর ইস্যু জিইয়ে রাখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, এই দুজন সাবেক কর্মকর্তাসহ সরকারসংশ্লিষ্ট আরো অনেকের দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণসহ লিফলেট বিতরণ করার বিষয়েও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এইচ এম এরশাদের আমলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছিল বলে বৈঠকে জানান একজন নেতা। জানা গেছে, দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে দলের কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র থাকে না, সে দেশে এমন লুটেরা শ্রেণির সৃষ্টি হয়। এখন তা-ই হচ্ছে। কে কত টাকা লুট করতে পারে, সেই প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, ‘আমি একজন বৃহৎ করদাতা ব্যক্তি। আমার আয়করের হিসাবে গরমিল দেখিয়ে মামলা করলেও হাইকোর্ট তা খারিজ করেছে। সেই মামলায় আপিল করে আমাকে সাত বছরের সাজা দেওয়া হলো। অথচ রাষ্ট্রের শত-হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কিভাবে বেনজীর আহমেদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান? কিভাবে আজিজ আহমেদ বীরদর্পে দেশে ঘুরে বেড়ান?’
বিএনপি নেতাদের আলোচনায় সরকারসংশ্লিষ্ট আরো অনেকের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি উঠে আসে। কলকাতায় খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত বলে মনে করেন তাঁরা। বৈঠকে নেতাদের আলোচনায় আনারের একজন রাজনৈতিক গডফাদার নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে নেতারা বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের এ ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ বিএনপি আগে থেকেই করে আসছিল। তাদের সেই অভিযোগের সত্যতা এখন গণমাধ্যমের মাধ্যমে বের হয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার বিষয় আবারও আলোচনায় উঠেছে। কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ অনির্ধারিত এই আলোচনা উত্থাপন করলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। কাউন্সিলের পক্ষে তিনিও যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, এখনই কাউন্সিল করার সময়। দলের চেয়ারম্যানও নেতাদের বক্তব্যে সায় দেন। তবে এ নিয়ে আলোচনা বাড়াননি তিনি।