রমজানের শেষ দশকে মুমিনের করণীয়

প্রকাশকালঃ ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ ২৪২ বার পঠিত
রমজানের শেষ দশকে মুমিনের করণীয়

মজানের রোজা কবুল হওয়া তথা রমজান ফলপ্রসূ হলো কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতেন পূর্বসূরি বুজুর্গরা। বিশেষত রমজানের শেষভাগে তাদের ব্যাপারে উদ্বেগ বেড়ে যেত। রমজানের শেষভাগে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘আমাদের মধ্যে কার রোজা কবুল হলো, আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাব এবং কে বঞ্চিত হলো তাঁর জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করব। হে সৌভাগ্যবান! যার রোজা কবুল হয়েছে তোমাকে অভিনন্দন এবং হে হতভাগা! যার রোজা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে আল্লাহ তোমার পাপ মার্জনা করুন।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২১০)

রমজানে কোনো মুমিন নিজের ভেতর পরিবর্তন আনতে পারলেন কি না তা বোঝা যায় তার পরবর্তী সময়ের আমল ও আচরণ দ্বারা। ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, ‘রমজানের রোজা কবুল হওয়ার লক্ষণ হলো রমজানের পর পুনরায় রোজা রাখতে সক্ষম হওয়া। কেননা আল্লাহ যখন কোনো বান্দার আমল কবুল করেন তখন তাকে সে আমল পুনরায় করার তাওফিক দেন।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২২১)


রমজানের রোজা কবুল হওয়া এবং তার প্রধান লক্ষ্য ‘তাকওয়া’ (আল্লাহভীতি) অর্জনের নিদর্শন তিনটি—এক. আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে একনিষ্ঠ হওয়া, দুই. পাপ কাজে অনীহা ও ভালো কাজে আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া, তিন. ভালো কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারা। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা ২১৫)

শেষ দশক ফসল ঘরে তোলার সময় : পুরো রমজান মাসই মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে শেষ দশকের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এটা পবিত্র রমজানের ফসল ঘরে তোলার সময়। কেননা বেশির ভাগ আলেমের মতে, এ দশকেই রয়েছে ‘লাইলাতুল কদর’ বা কদরের রাত। কোরআনের ভাষ্যমতে যে রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে। আর মহিমান্বিত রাত সম্পর্কে তুমি কি জানো? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত : ১-৩)

মহানবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগিতে আরো বেশি মনোযোগী হতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন, রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবার পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)


ফুরিয় যাচ্ছে সময় : রমজানের শেষ দশক চলছে। দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে নিজেকে পাপমুক্ত করার সময়। এখনো যদি নিজেকে পরিশুদ্ধ করা না যায় এবং আল্লাহর ক্ষমা সৌভাগ্যে না হয় তবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ধ্বংস। কেননা জিবরাইল (আ.) সেসব মানুষের ধ্বংসের দোয়া করেছেন যারা রমজান পেয়েও নিজেকে পাপমুক্ত করতে পারেনি এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দোয়ার পর আমিন বলেছেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৮৮)

অপর বর্ণনায় মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলাধূসরিত হোক যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

আল্লাহ সবাইকে রমজানের ক্ষমা, অনুগ্রহ ও বরকত নসিব করুন এবং রমজানের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে জীবনে পরিবর্তন আনার তাওফিক দিন। আমিন