অকটেনে ১৩ টাকা, ডিজেলে ৫ টাকা লাভ করে বিপিসি

প্রকাশকালঃ ২৮ মে ২০২৩ ০৫:০৬ অপরাহ্ণ ১২১ বার পঠিত
অকটেনে ১৩ টাকা, ডিজেলে ৫ টাকা লাভ করে বিপিসি

কটেন, পেট্রল, ডিজেলসহ তেলে গ্রাহক পর্যায়ে এখনই জ্বালানির দাম প্রতি লিটারে ৫ থেকে ১০ টাকা কমানোর সুযোগ আছে বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডি বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রির পর বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতি লিটার ডিজেলে ৫ টাকা এবং প্রতি লিটার অকটেনে ১৩ টাকা মুনাফা করে।

গতকাল শনিবার সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিপিডি। ধানমন্ডির নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। উপস্থিত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত এই সাত বছরে বিপিসি মোট ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা লাভ করেছে। কর দেওয়ার পর নিট মুনাফা ছিল ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা। এ সময়ে ৭ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা কর দিয়েছে বিপিসি। এ বিষয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে, তখন দেশের বাজারে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে, তখন স্থানীয় বাজারে দাম কমানো হয় না।


আগামী বাজেট চ্যালেঞ্জের

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এবারই সামষ্টিক অর্থনীতি সবচেয়ে বেশি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আইএমএফের শর্ত এবং জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সার্বিকভাবে সংস্কার প্রয়োজন। এই সংস্কার যেন সুচিন্তিত এবং স্বচ্ছ হয়। খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া পাচার করা টাকা দেশে আনার সুযোগ বাতিল করতে হবে। সার্বিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে সিপিডি।

তাই আগামী বাজেটও চ্যালেঞ্জের বলে মনে করে সিপিডি। সিপিডি বলেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী করছাড় কমাতে হবে। জ্বালানির খাতের বেঁচে যাওয়া ভর্তুকি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ থেকে পেনশন বাদ দিতে হবে।


বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, একটি অভূতপূর্ব পরিস্থিতি পার করছি আমরা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি (কোভিডের প্রথম বছর বাদে) গত ১১ বছরের মধ্যে কম। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তাই গতানুগতিক প্রবৃদ্ধি নয়; বণ্টনের ন্যায্যতা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাই আগামী বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

মূল্যস্ফীতি অন্যতম প্রধান সমস্যা বলে উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, সুদের হার দিয়ে অন্য দেশ মূল্যস্ফীতি কমিয়েছে। আমরা সেই চেষ্টাই করিনি।

চলতি অর্থবছরের এনবিআরের শুল্ক-কর আদায়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে বলে মনে করে সিপিডি।


গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থনীতিতে একধরনের সংস্কারবিমুখীনতা চলছে। যতক্ষণ সংস্কারের ‘কুইনাইন’ না খাবে, ততক্ষণ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।

সামনে নির্বাচন, তাই রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তা না হলে আগামী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে।


ডলারের দাম ১০৫-১১৬ টাকার মধ্যে থাকবে

সিপিডি মনে করে মুদ্রা বিনিময়ের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে প্রতি ডলারের দাম ১০৫ থেকে ১১৬ টাকার মধ্যে থাকবে। যা বর্তমান দরের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য নয়। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিতে পারে।

গত বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। আর সর্বশেষ ১০৮ টাকায় ডলার বিক্রি হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এর বেশি দামেও ডলার বিক্রি হতে দেখা যায়। আইএমএফও মুদ্রা বিনিময়ের হার বাজারভিত্তিক করার শর্ত দিয়েছে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে তা করা হবে বলে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাচার করা টাকা আসছে!

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাচার করা টাকা রেমিট্যান্স হিসেবে আসছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কথা বলেছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩০৫ কোটি ডলার এসেছে। গতবার একই সময়ে ২৮৭ কোটি ডলার এসেছিল। অন্যদিকে গত জুলাই-এপ্রিল সময়ে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০৪ কোটি ডলার। যা আগের বার একই সময়ের চেয়ে ৮২ কোটি ডলার কম।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসছে, যা অস্বাভাবিক। এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, পাচার করা অর্থ ফেরত আসছে। যেহেতু রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে আনলে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যায়, সেই সুযোগ কেউ নিতে পারেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখতে পারে। পাচার করা অর্থের ওপর করারোপ হয়। উল্টো এখন রেমিট্যান্স হিসেবে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, সেই সুযোগ নিতে পারেন অনেকে।

সিপিডি আরও বলছে, ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১২ লাখ ৩০ হাজার জন সৌদি আরবে গেছেন। যা ওই সময় প্রবাসে যাওয়া সাড়ে ২১ লোকের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ। কিন্তু এই সময়ে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কমেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেড়েছে। রেমিট্যান্স পাঠানোয় সৌদি আরবের জায়গা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।


ভিসা নিষেধাজ্ঞা ‘অপমানজনক’

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার ইস্যুটি কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, এমন প্রশ্ন করা হলে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের জন্য অপমানজনক।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আমাদের নিজেদেরই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। শর্ত দিয়ে ভালো নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া দুঃখজনক।