৫৪৬ রানের রেকর্ড ব্যবধানে আফগানিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ
প্রকাশকালঃ
১৮ জুন ২০২৩ ০৪:০৬ অপরাহ্ণ ২৬০ বার পঠিত
আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানের রেকর্ড ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট ইতিহাসে রানের হিসাবে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয়। ট্রফি নিয়ে তাই হাসিটা লেগেই ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মুখে। ছবি : মীর ফরিদ
আফগানিস্তানের ৯ উইকেট পড়ে যেতেই মধ্যাহ্নভোজের বিরতি পিছিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু এরপর ম্যাচ শেষ হতে হতেও আর হয় না। বাংলাদেশ দলও দুইবার জয়োৎসব করে ফেলার পর বুঝল যে ম্যাচ তখনো শেষ নয়। সেই সঙ্গে তাসকিন আহমেদের অপেক্ষাও ফুরোয় না।
শেষ পর্যন্ত তাঁকে অনির্দিষ্ট অপেক্ষায়ও থেকে যেতে হয়। টেস্টে প্রথমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তির নাগালই পাওয়া হয়ে ওঠে না আর। তাঁর বোলিংয়ে পর পর দুই বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান আফগানদের শেষ ব্যাটার জহির খান। তাতে জয়োল্লাস বিলম্বিত দুই দফা।
অথচ প্রথমবার জহির কট বিহাইন্ড হতেই দলের বিশাল জয়ের পাশাপাশি তাসকিনের অর্জনও মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এই ফাস্ট বোলারকে ঘিরে চলতে থাকা উৎসব ক্ষণিক পরেই থামাতে হয়। রিভিউ নেওয়ার পর দেখা যায় যে বল জহিরের ব্যাট কিংবা গ্লাভস, কোথাও লাগেনি। পরের বলেও জয় পিছিয়ে যাওয়ার নিয়তিই।
ফুলটসে জহির বোল্ড হওয়ার পরও কোমরের বেশি উচ্চতার জন্য আম্পায়ার ‘নো’ ডাকেন। তাই বলে অপেক্ষা দীর্ঘও হয় না খুব। আউট না হয়েও বিদায় হতে হয় জহিরকে। ৩৭ রানে ৪ উইকেট নেওয়া তাসকিনের বাউন্সারে বল কনুইতে লেগে এমন চোট লাগে যে তাঁর পক্ষে ব্যাটিং করাই সম্ভব ছিল না। এই অপঘাতেই এবার আরো কমে থামে আফগানিস্তান।
প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রান করা সফরকারীরা ৬৬২ রানের অসম্ভব লক্ষ্য তাড়ায় ১১৫ রানে গুটিয়ে যেতেই লেখা হয় নতুন এক ইতিহাস। এর সঙ্গে মিশে থাকল মধুর এক প্রতিশোধ নেওয়ার আনন্দও। দুই দলের টেস্টে এর আগে একবারই দেখা হয়েছিল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম দেখায় আফগানদের কাছে ২২৪ রানের বিব্রতকর হারে লজ্জায় মুখ লুকানো বাংলাদেশের এবার নিশ্চিতভাবেই সেই জ্বালা জুড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল। নিজেরা যত রানে হেরেছিল, এবার আফগানদের তার চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বড় ব্যবধানের হারও ফিরিয়ে দেওয়া গেল। বাংলাদেশের জয় ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে। যা নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় তো বটেই, টেস্টে রানের দিক থেকে এর চেয়ে বড় জয়ই আছে আর কেবল দুটি। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১৯৩৪ সালে সেই অস্ট্রেলিয়াই ৫৬২ রানের হার ফিরিয়ে দিয়েছিল ইংলিশদের। তবে ওই দুটো জয়ই ৯৫ ও ৮৯ বছর আগের ঘটনা। সেই হিসাবে ক্রিকেটের আধুনিক কাল ও এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জয় বাংলাদেশেরই।
এর আগে রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২২৬ রানের, ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। যেটি আবার ছিল টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম জয়ও। এর দ্বিগুণেরও বড় ব্যবধানে জেতার প্রেক্ষাপট তৈরি করে রেখেছিল বাংলাদেশ। গতকাল সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে এক সেশনের বেশি লাগেওনি। ২ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শুরু করা আফগানরা ৭০ রানে হারায় ৮ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৩৯ ওভারের পর এবার আফগানরা টেকে আরো কম, ৩৩ ওভার।
আরেকবার তাদের ইনিংস ক্ষণস্থায়ী করার অভিযানে দিনের শুরুতেই নেমে পড়েন এবাদত হোসেন। নাসির জামালকে উইকেটের পেছনে লিটন কুমার দাসের গ্লাভসে জমিয়ে বিদায় করেন। পর পর দুই ওভারে আফসার জাজাই ও হাশমতউল্লাহ শহীদির ‘কনকাশন সাব’ বাহির শাহকে ফিরিয়ে আফগানদের লড়াইয়ের আশা শেষ করে দেওয়ার কাজটি করেন শরিফুল ইসলাম। বাকি কাজ সারেন একটু দেরিতে আক্রমণে আসা তাসকিন। রহমত শাহকে দিয়ে শুরু তাঁর শিকারযজ্ঞ, দুর্দান্ত ডেলিভারিতে স্টাম্প উপড়ে ফেলেন করিম জানাতেরও। ইয়ামিন আহমেদজাইকে বিদায় করে প্রথমবারের মতো টেস্টে ৫ উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনাও জাগান।
শেষ পর্যন্ত তাঁর সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হলেও তাসকিন-এবাদত-শরিফুল ত্রয়ী সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জনের অন্য এক চূড়া ছুঁয়েছেন ঠিকই। মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে পেসাররা নিয়েছেন ১৪ উইকেট। যা দেশ-বিদেশ মিলিয়ে এক টেস্টে তাঁদের সর্বোচ্চ শিকার ধরার ঘটনা। আগের সেরা ছিল ১৩ উইকেট, মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় লেখা হয়েছিল যে পারফরম্যান্সে। এবার নতুন ইতিহাস লেখার পথে পেসাররা ছাড়িয়ে গেলেন নিজেদের। তা-ও আবার দেশের মাটিতে!
বাংলাদেশ : ৩৮২ ও ৪২৫/৪ ডি.
আফগানিস্তান : ১৪৬ ও ৩৩ ওভারে ১১৫, ফল : বাংলাদেশ ৫৪৬ রানে জয়ী