প্রকাশকালঃ
০৪ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ ২০৯ বার পঠিত
সাহাবিদের মধ্যে যাঁরা পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে বিজ্ঞ পাঠক, তার ভাব ও অর্থের সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞ, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ছিলেন তাঁদের একজন। জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কোরআন গবেষণায় ব্যয় করেছেন। তিনি বেশির ভাগ সময় রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে থাকতেন। সরাসরি রাসুল (সা.) থেকে তিনি কোরআন মুখস্থ করার দিকে মনোনিবেশ করেন।
কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে কোরআন শিখতেন। তিনি শুধু রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে তা মুখস্থই করতেন না, মুখস্থ করা আয়াত তিনি রাসুল (সা.)-কে শোনাতেন। তাঁর তিলাওয়াতে কোনো ভুল থাকলে রাসুল (সা.) তাঁকে সংশোধন করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৮৭৩) রাসুল (সা.) থেকে তিনি কোরআনের ৭০টি সুরা মুখস্থ করেছিলেন।
শাকিক ইবনে সালামাহ (রা.) বলেন, একবার আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আমাদের সামনে ভাষণ দেন এবং বলেন, আল্লাহর শপথ! সত্তরের বেশি সুরা আমি রাসুল (সা.)-এর মুখ থেকে শিখেছি। আল্লাহর কসম! তাঁর [রাসুল (সা.)] সাহাবিরা জানেন, আমি তাঁদের চেয়ে আল্লাহর কিতাব সম্বন্ধে বেশি জ্ঞাত; অথচ আমি তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম নই। শাকিক (রা.) বলেন, সাহাবিরা তাঁর কথা শুনে কী বলেন তা শোনার জন্য আমি মজলিসে বসে থাকলাম, কিন্তু আমি কাউকে অন্য রকম কথা বলে আপত্তি করতে শুনিনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০০০)
পবিত্র কোরআনের জ্ঞানে তিনি কতখানি পারদর্শী ছিলেন সে সম্পর্কে তাঁর নিজের একটি মন্তব্য থেকে বোঝা যায়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই তাঁর কসম! আল্লাহর কিতাবে এমন কোনো সুরা নেই, যা নাজিল হওয়ার জায়গার ব্যাপারে আমি জানি না, এরূপ কোনো আয়াত নেই যার নাজিল হওয়ার স্পষ্ট কারণ আমার অজানা। যদি আমি এমন কোনো লোককে জানতাম যিনি আমার তুলনায় অধিক কোরআন জানেন এবং তাঁর কাছে উট যেতে পারে, তাহলে আমি তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য উটে আরোহণ করতাম। (মুসলিম, হাদিস : ২৪৬৩)
তিনি অত্যন্ত বিশুদ্ধ ভাষায় কোরআন তিলাওয়াত করতেন। রাসুল (সা.) তাঁর তিলাওয়াতের প্রশংসা করেছেন এবং সাহাবিদের তাঁর থেকে কোরআন শিখতে উৎসাহিত করেছেন। মাসরুক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা চার ব্যক্তির কাছ থেকে কোরআন শিক্ষা করো—আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ, সালিম মাওলা আবু হুজাইফা, উবাই ইবনু কাব ও মুআজ ইবনু জাবাল (রা.)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৭৫৮)
রাসুল (সা.) তাঁকে কোরআন তিলাওয়াত করতে বলতেন এবং তাঁর তিলাওয়াত শুনে তিনি অশ্রুসিক্ত হতেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আমাকে বলেন, তুমি আমার কাছে কোরআন পাঠ করো। আমি জবাবে বললাম, আমি আপনার কাছে কোরআন পাঠ করব, অথচ আপনারই ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি বললেন, আমি অন্যের কাছ থেকে কোরআন পাঠ শোনা পছন্দ করি। আমি তখন সুরা নিসা পাঠ করলাম, যখন আমি এ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম : ‘তারপর চিন্তা করো, আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে একজন করে সাক্ষী হাজির করব এবং এই সবার ওপর তোমাকে সাক্ষী হিসেবে হাজির করব, তখন তারা কী করবে।’ তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘থামো!’ আমি লক্ষ করলাম, তাঁর (নবীজির) দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৫৫)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) ছিলেন কোরআনের প্রকৃত ধারক, বাহক, প্রচারক ও গবেষক। তিনি কোরআনের প্রকৃত ধারকের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কোরআনের ধারক ব্যক্তিকে চেনা যাবে তার রাত্রিযাপন দেখে, যখন সবাই ঘুমে বিভোর; চেনা যাবে তার দিন দেখে, যখন মানুষ রোজাবিহীন; চেনা যাবে তার দুঃখ দেখে, যখন সবাই আনন্দে আত্মহারা; চেনা যাবে তার কান্না দ্বারা, যখন মানুষ হাস্যরসে মাতোয়ারা; চেনা যাবে তার নীরবতা দেখে, যখন সবাই গল্প-গুজবে মত্ত; চেনা যাবে তার বিনয়-স্থিরতা দ্বারা, যখন লোকেরা দম্ভ-অহংকারে বিবেকহারা। সুতরাং কোরআনের ধারক হবেন অশ্রুময়-বেদনার্ত, ধৈর্যশীল-প্রজ্ঞাবান ও নীরবতাপ্রেমী। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৩৬৭৩৫)