মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র রওজা শরিফের সামনে দাঁড়িয়ে রাসুল (সা.)-কে সবাই সালাম নিবেদন করেন। এ জন্য মসজিদের পশ্চিম দিক থেকে প্রবেশ করে পূর্ব দিক দিয়ে বের হতে হয়। মদিনার ইতিহাস গবেষক ড. ফুয়াদ জাইফুল্লাহ মাগামাসি বলেন, রাসুল (সা.)-এর স্ত্রীদের ঘর বা কামরাগুলো রওজা শরিফের পশ্চিমে অবস্থিত। এর মধ্যে কিবলার দিকে অর্থাৎ মসজিদে নববীর দক্ষিণ দিকে আছে উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.)-এর ঘর।
এরপর উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর ঘর। উভয় ঘরের মাঝখানে ছিল একটি সংকীর্ণ পথ। তা দিয়ে সহজে চলাফেরা করা যেত না। বর্তমানে রওজার জিয়ারতকারীরা হাফসা (রা.)-এর ঘরের এক অংশে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করেন।
রওজার ঠিক দক্ষিণ পাশের দেয়ালে একটি জানালা খোলা রয়েছে। জানা যায়, জানালাটি দীর্ঘ ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খোলা রাখা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে ভালোবাসার ইতিহাস। ১৭ হিজরিতে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) মসজিদ-ই-নববী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন।
যেন মুসল্লিদের মসজিদ ও রওজা শরিফে আসা-যাওয়ার পথে কোনো সমস্যা না হয়। কিন্তু সম্প্রসারণের সময় রওজার দক্ষিণ পাশে উম্মুল মুমিনিন হাফসা বিনতে ওমর (রা.)-এর ঘর ভাঙার প্রয়োজন দেখা দেয়।
ওমর (রা.) ভাবছিলেন, তিনি কিভাবে বিষয়টি হাফসা (রা.)-এর কাছে তুলে ধরবেন? কারণ তাঁর মেয়ে তো প্রিয় নবীকে হারিয়ে এখন কেবল রওজার পাশে থেকে অতীতের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আছেন। একদিন ওমর (রা.) হাফসা (রা.)-এর কাছে সেই ঘর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন এবং মদিনায় সবচেয়ে প্রশস্ত বাড়ির আশ্বাস দেন। এ কথা শুনে হাফসা (রা.) প্রচণ্ড কান্না শুরু করেন এবং ঘর ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
বাস্তবেই কেউ এমন স্মৃতিবিজড়িত স্থান ছাড়তে চাইবে না। দুদিন পর ওমর (রা.) আবার বিষয়টি তুলে ধরলে হাফসা (রা.) এবারও কেঁদে ফেলেন এবং শক্তভাবে নাকচ করে দেন। তাই অন্যরাও তাঁর কাছে বিষয়টি তুলে ধরার সাহস করেননি।
এর কিছুদিন পর ওমর (রা.) তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.)-কে নিয়ে হাফসা (রা.)-এর কাছে যান। তখন আবদুল্লাহ (রা.) তাঁর বোনকে এই ঘর ছাড়ার বিনিময়ে নিজ বাড়ি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তার বাড়িটি হাফসার ঘরের পাশেই ছিল। সেখান থেকে রওজা শরিফ সরাসরি দেখা যেত। তখন হাফসা (রা.) একটি শর্তে সেই বাড়িতে যেতে রাজি হন। তা হলো সেই বাড়ি থেকে একটি জানালা খুলে দিতে হবে, যা দিয়ে প্রিয় নবী (সা.)-এর রওজা দেখা যাবে এবং তা কখনো বন্ধ করা যাবে না। ওমর (রা.) তাঁকে প্রতিশ্রুতি দেন এবং তাঁর আকাঙ্ক্ষা মতে একটি জানালা খুলে দেন। এরপর যুগে যুগে মসজিদে নববী অনেক বার সম্প্রসারিত হলেও সেই জানালা খোলা অবস্থায় অক্ষত রাখা হয়েছে। এভাবে প্রায় দেড় হাজার বছর অতিবাহিত হয়।
ইসলামী ইতিহাসের গ্রন্থগুলোতে জানালাটি খাওখা নামে পরিচিত। ইমাম সুয়ুতি (রহ.)-এর মতে, এর নাম খাওখাতু ওমর ইবনুল খাত্তাব এবং ইবনে কাসির (রহ.)-এর মতে, এর নাম খাওখাতু আলে ওমর। তা ছাড়া কিছু বর্ণনা মতে, হাফসা (রা.)-কে উসমান বিন আফফান (রা.) অন্য বর্ণনা মতে ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) জানালা খোলা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে ইমাম সুয়ুতি তাঁর তারিখুল খুলাফা গ্রন্থে ওমর (রা.)-এর বিষয়টি বেশি নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেন।