আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে ইবরাহিম (আ.) বলেন, হে আমার রব, আমি তো আপনার নির্দেশমতো সব কিছু করেছি। এখন আপনি আমাদের এখানে ইবাদতের পদ্ধতি শিখিয়ে দিন। তখন জিবরাইল (আ.) এসে বললেন, আপনি ও ইসমাইল (আ.) এই ঘর সাতবার তাওয়াফ করবেন। প্রতি তাওয়াফের সময় দুই রুকন চুম্বন করবেন।
ইবরাহিম (আ.)-এর আগেই এখানে চুম্বন করেছেন। তাওয়াফের পর ইবরাহিম (আ.) নিজ সন্তানকে নিয়ে মাকামের পেছনে নামাজ পড়েন। অতঃপর জিবরাইল (আ.) ইবরাহিম (আ.)-কে সাফা, মারওয়া, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাসহ বিভিন্ন স্থান দেখাতে লাগলেন। মিনায় প্রবেশ করে আকাবা থেকে নামার পথে ইবলিস মানুষের রূপ ধরে আসে।
অন্য বর্ণনা মতে, আল্লাহ তাআলা জিবরাইল (আ.)-কে পাঠান। অতঃপর তিনি ইবরাহিম (আ.)-কে নিয়ে হজ করেন। কোরবানির দিন ইবলিস জামারা আকাবার সামনে এসে দেখা দেয়। জিবরাইল (আ.) তাকে পাথর নিক্ষেপ করতে বলেন।
তখন ইবরাহিম (আ.) সাতটি পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করলে ইবলিস চলে যায়। কিন্তু জামারা সুফলায় আবার ইবলিস উপস্থিত হয়। জিবরাইল (আ.) তাকে সাত পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করতে বলেন। অতঃপর ইবরাহিম (আ.) পাথর নিক্ষেপ করলে ইবলিস চলে যায়। এরপর জামারা উসতায় পুনরায় ইবলিস এসে দেখা দেয়।
জিবরাইল (আ.) তাকে তাকবির বলতে এবং পাথর নিক্ষেপ করতে বলেন। তখন ইবরাহিম (আ.) সাতটি টুকরা নিক্ষেপ করলে ইবলিস চলে যায়। এরপর তিনি আরাফা এসে পৌঁছেন। তখন জিবরাইল (আ.) জিজ্ঞাসা করেন, হে ইবরাহিম, আপনি আপনার ইবাদত সম্পর্কে জেনেছেন? ইবরাহিম (আ.) বলেন, হ্যাঁ, বুঝেছি। তখন থেকেই স্থানটি আরাফাত নাম ধারণ করে।
হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর ইবরাহিম (আ.)-কে হজের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্য বর্ণনা মতে, ইবরাহিম (আ.) পবিত্র ঘর নির্মাণের পর বলেন, হে আমার রব, আমি তো শেষ করেছি। তখন আল্লাহ তার অন্তরে এই নির্দেশ দেন যেন তিনি মানুষের হজের ঘোষণা দেন। এই বর্ণনা মতে হজের আগ থেকেই আজানের নিয়ম চালু ছিল। তবে প্রথম বর্ণনা অনুসারে বিষয়টি এমন নয়।
হজের নির্দেশ আসার পর ইবরাহিম (আ.) বলেন, আমার আওয়াজ কার কাছে পৌঁছবে? আল্লাহ বলেন, আপনি ঘোষণা দিন আর পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। ইবরাহিম (আ.) বলেন, আমি কিভাবে বলব? তখন আল্লাহ বলেন, আপনি বলুন, হে মানুষ, তোমরা রবের ডাকে সাড়া দাও। তিনি তা তিনবার বলেন। অতঃপর ইবরাহিম (আ.) মাকামের ওপর আরোহণ করেন। তা তাকে নিয়ে ওপরে ওঠে এমনকি পাহাড়সমান উঁচু হয়। অন্য বর্ণনা মতে, ইবরাহিম (আ.) আবু কুবাইসে আরোহণ করেন এবং হজের ঘোষণা দেন। তখন পৃথিবীর উঁচু-নিচু, পাহাড়-পর্বত, জল ও স্থল, জিন ও মানুষসহ সব কিছু তার আওয়াজ শুনতে পায়।
ইবরাহিম (আ.) বলেন, হে মানুষ, তোমাদের ওপর পবিত্র ঘরের উদ্দেশে হজ করা আবশ্যক হয়েছে। তোমরা তোমাদের রবের ডাকে সাড়া দাও। অন্য বর্ণনা মতে, আল্লাহ তোমাদের হজ করার নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তিনি তোমাদের জান্নাত দান করেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেন। তখন তার ডাকে পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম তথা সব প্রান্তের মানুষ সাড়া দেয়। সবাই বলে ওঠে, লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। অন্য বর্ণনা মতে তখন ভূপৃষ্ঠের পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তের সবাই তার আওয়াজ শুনেছে। এমনকি নারী ও পুরুষের ওষ্ঠে থাকা সন্তানরাও তার ডাকে সাড়া দেয়। তাই কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ হজ পালন করবে তারা সবাই ইবরাহিম (আ.)-এর ডাকে সাড়া দেন।
ইবরাহিম (আ.)-এর ডাকে সাড়া দেওয়ার পরিমাণ অনুসারে মানুষ প্রতিবছর হজ পালন করে। যে একবার সাড়া দিয়েছে সে একবার হজ করে। যে এর বেশি সাড়া দিয়েছে সে বেশি পরিমাণ হজ করে। বর্ণিত আছে, সেই ঘটনা ও মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রেরণের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে তিন হাজার বছর অতিবাহিত হয়েছে। আর ইবরাহিম (আ.)-এর ডাকে লাব্বাইক বলে সর্বপ্রথম যারা সাড়া দিয়েছিল তারা ইয়েমেনের অধিবাসী।
এক বর্ণনা মতে, ইবরাহিম (আ.) ডান দিকে ফিরে মহান আল্লাহ ও তাঁর ঘরে হজের ডাক দেন। তখন লাব্বাইক লাব্বাইক বলে উত্তর দেওয়া হয়। এভাবে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরে একই আহ্বান জানানো হয়। অতঃপর ইবরাহিম (আ.) ইসমাইল (আ.) ও হারামের স্থানীয় মুসলিমদের নিয়ে পবিত্র হজ পালন করেন। তিনি তাদের নিয়ে মিনায় নামাজ পড়ে সেখানে রাত্রি যাপন করেন। সকালে সবাইকে নিয়ে তিনি নামিরায় মধ্যাহ্ন পর্যন্ত অবস্থান করে সেখানে নামাজ পড়েন। অতঃপর আরাফার মাওকিফে অবস্থান করেন। বর্তমানে এখানেই ইমাম অবস্থান করেন। সূর্যাস্তের পর তিনি মুজদালিফায় গমন করে নামাজ পড়েন। সেখানে রাত্রি যাপন করে ফজর নামাজ পড়েন। অতঃপর সকাল হলে তিনি সঙ্গে থাকা সবাইকে পাথর নিক্ষেপের বিষয়টি শিক্ষা দেন। এভাবে হজের পুরো কার্যক্রম শেষ করেন। এরপর ইবরাহিম (আ.) শামে ফিরে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।