বিএনপিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে দাঁড় করানোর এক ধরনের অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তবে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “এই অপচেষ্টা কখনোই সফল হবে না।”
রোববার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান কোনো একক রাজনৈতিক দলের ফসল নয়। এটি দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ। যারা এই সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবার রক্ত, ত্যাগ ও অবদানের ফসলই হলো ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান। মাত্র ৩৬ দিনে ফ্যাসিস্ট শাসকের পতন ঘটেছে—এ কথা আংশিক সত্য। আসলে এটি ছিল দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতার ফল। তাই বিএনপিকে জুলাই অভ্যুত্থানের বিপক্ষে দাঁড় করানোর যে কোনো চেষ্টা ব্যর্থ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানে বিএনপির অন্তত ৪২২ জন নেতা-কর্মী জীবন দিয়েছেন। আমরা তাদের নাম-ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করেছি। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিএনপির রক্ত, ত্যাগ ও সংগ্রামের সিঁড়ি বেয়ে এই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। এতে শুধু বিএনপি নয়, সব ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক দল ও জনগণের ত্যাগ জড়িয়ে আছে। শাপলা চত্বরে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, তা বিশ্ব ইতিহাসেও বিরল।”
ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলামের এক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। নাহিদ ইসলাম সালাহউদ্দিনের প্রতি “জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে” মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, “একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে—আমি সেটিকে স্বাগত জানাই। গণতন্ত্রে মতভেদ থাকতে পারে, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। কেউ কেউ আবেগে কিছু অতিরিক্ত কথা বলেছেন—আমি তা নিয়ে সমালোচনা করতে চাই না। তরুণ প্রজন্মের মাঝে যদি সামান্য ভুল থেকেও থাকে, আমরা তা অভিজ্ঞতার দৃষ্টিতে দেখি। তারা যেন ভুল থেকে শিক্ষা নেয়—এটাই প্রত্যাশা।”
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় জীবনের এক গৌরবময় অধ্যায়। এটি কোনোভাবেই কলঙ্কিত করা যাবে না। বক্তৃতা-বিবৃতিতে সবাইকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই আমাদের শক্তি, যা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চালিকাশক্তি।”
জামায়াতে ইসলামের আমিরের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন বলেন, “তিনি বলেছেন, জুলাই যোদ্ধাদের ফ্যাসিবাদের দোসর বলা উচিত নয়—আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তবে কেউ কেউ আমার বক্তব্য কেটে বিকৃতভাবে প্রচার করছেন, এটা বন্ধ করা উচিত।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শে যারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, আমি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। এই তরুণ প্রজন্মই ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক—গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে তাদের ভূমিকা অপরিসীম।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে কি না—আমি তা মনে করি না। তবে আংশিক অংশ কেটে প্রচার করা হয়েছে বলে ধারণা করি। আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত কোনো সংগঠন বা ব্যক্তি ওই বিশৃঙ্খল ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না।”
কিছু ভিডিওর উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, “আমি দেখেছি, কিছু তরুণ নিজেরাই ব্যারিকেড সরাচ্ছে বা পড়ে যাচ্ছে—এসব বিষয় তদন্তাধীন। সরকার একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে। রিপোর্ট আসার পরই সত্যতা জানা যাবে। তবে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা তৈরির জন্য কোনো গোষ্ঠী এসব ঘটনার পেছনে থাকতে পারে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
শেষে তিনি বলেন, “আমরা চাই, জুলাই অভ্যুত্থান হোক কলঙ্কমুক্ত, সত্য ও ত্যাগের প্রতীক। এর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার কোনো প্রয়াসই সফল হবে না।”