মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে বিশ্ববাসীর কাছে শান্তির বার্তাবাহক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তিনি তাঁর কথা ও আদর্শের মাধ্যমে এমন এক মানবগোষ্ঠীর গোড়াপত্তন করেছিলেন, ইতিহাসে যার নজির মেলা ভার। নিম্নে আমরা তেমন কিছু প্রিয় নবীর মুখনিঃসৃত ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য ও আদর্শের কথা তুলে ধরছি।
ভ্রাতৃত্ব বন্ধন
তিনি তাঁর শিষ্যদের সর্বদা ভ্রাতৃত্ব ভালোবাসা সম্মান ও সম্ভ্রম, উপাসনা, আনুগত্য, আদবকায়দার শিক্ষা দিতেন। এবং এসব নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলার জন্য প্রেরণা, উৎসাহ ও পরামর্শ দান করতেন। এক সাহাবি প্রিয় নবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, কোন ইসলাম উত্তম? অর্থাৎ ইসলামের কোন আচার-আচরণটি সবচেয়ে উত্কৃষ্ট? আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে উত্তম? তিনি বলেন, তুমি লোকদের খাদ্য খাওয়াবে এবং চেনা-অচেনা সবাইকে সালাম দেবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৮)
প্রতিবেশীর অধিকার প্রতিবেশীর অধিকারের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার প্রতিবেশী তার অন্যায়-অত্যাচার থেকে নিরাপদ নয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৬)
তিনি আরো বলেছেন, যখন (সাহাবারা) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বলেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১)
মুসলমানদের অধিকার সম্পর্কে তিনি বলেছেন, নুমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সব মুসলিম একজন ব্যক্তি সমতুল্য। যদি তার চক্ষু পীড়িত হয়, তবে তার সমগ্র দেহ পীড়িত হয়ে পড়ে। যদি তার মাথা আক্রান্ত হয় তাহলে সমগ্র শরীরই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক মুমিন আর এক মুমিনের জন্য ইমারত তুল্য, যার এক অংশ আরেক অংশকে সুদৃঢ় করে। আর তিনি (সা.) তাঁর এক হাতের আঙুল আরেক হাতের আঙুলে প্রবেশ করিয়ে দেখালেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪৬)
হিংসা-বিদ্বেষ পরিহার
আর এই জন্যই তিনি পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ রাগ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পর বিদ্বেষ ভাবাপন্ন হইয়ো না, হিংসা করো না এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন থেকো না। আর তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও। কোনো মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাই থেকে তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে থাকবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৭৬)
দয়া ও ভালোবাসা
তিনি পরস্পর দয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা বিশ্ববাসীদের প্রতি সদয় হও, তখন আকাশবাসী অর্থাৎ আল্লাহও তোমাদের প্রতি সদয় হবেন। এ জন্য তিনি পরস্পর দান-সদকার কথা বলেছেন। তিনি দান-সদকার প্রতি উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেন, সদকা এবং দান খয়রাত পাপকে এমনভাবে মুছে দেয়, যেমন পানি আগুনকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। হাদিসে এসেছে, আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে মুসলিম কোনো বস্ত্রহীন মুসলিমকে কাপড় পরাবে, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরাবেন। যে মুসলিম কোনো অভুক্ত মুসলমানকে আহার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল-ফলাদি খাওয়াবেন। আর যে মুসলিম কোনো পিপাসু মুসলিমকে পানি পান করাবে, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত বিশুদ্ধ পানীয় পান করাবেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৮২)