আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
শত বাধা, কষ্ট ও দারিদ্রতা থামাতে পারেনি অদম্য মেধাবী শ্রাবনী, সুলতানা, মানছা, ইয়ানুর ও আফিয়াদের। তারা চিলমারী থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে পরিবারের মুখে ফুটিয়েছে হাসি। অদম্য এই ৬ মেধাবীরা চায় প্রকৌশলী, সেবিকা (নার্স) হয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করতে। তাদের এই সাফল্য অর্জনে সকলের মুখে হাসি ফুটালেও পড়াশোনা চালানোর খরচ নিয়ে চিন্তিত পরিবারের লোকজন।
মোছাঃ শ্রাবনী আক্তার চিলমারীর মাছাবান্দা এলাকার সুরুজ জামানের কন্যা। সুরুজ জামান পেশায় একজন অটোচালক, সম্পদ বলতে শুধু বাড়িভিটা। অটো চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই চালাতে হয় ৫ জনের সংসার। যেখানে সংসার চালানোই বড় কঠিন সেখানে মেয়ের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা তাকে ফেলিয়েছে বিপাকে।
শ্রাবনী আক্তার জানান, পরিবারের অভাব সাথে টানাপড়ার মধ্যে পড়াশোনা চালানো তার জন্য কঠিন ছিল তবুও তার ইচ্ছা শক্তি ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে। সে প্রকৌশলী হয়ে দেশের পাশাপাশি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চায়।
শ্রাবনীর পিতা-মাতা বলেন, মেয়ের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের আশা পূরণের জন্য আমাদের পাশে কেউ যদি দাঁড়াতো তাহলে হয়তো মেয়ের আশা পূরণ হতো।
মোছাঃ সুলতানা রাজিয়া চিলমারীর সবুজ পাড়া এলাকার মোঃ আবু তালেবের কন্যা। সুলতানার পিতা একজন পাঁপড় বিক্রেতা। সারাদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরে পাঁপড় বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই ৫ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান আবু তালেব। অভাবের কারণে মেয়েকে ভালো পোশাক এবং সময় মতো টিউশনি বা খাতা-কলমও দিতে পারেনি। এরপরেও তার সফলতা বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। সুলতানা এবারে থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোকেশনাল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার ইচ্ছা, উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে মানুষের মতো মানুষ হবে। সে চায় একজন নার্স (সেবিকা) হয়ে সেবা দিতে। মেয়ের এই স্বপ্ন পূরণের জন্য সকলের সহযোগিতা চায় তার পরিবার।
মোছাঃ মানছা আক্তার চিলমারীর কিশামতবানু নাড়াল পাড় এলাকার রুহুল আমিনের কন্যা। রুহুল আমিন পেশায় একজন কৃষক। জমি বলতে শুধু বাড়িভিটা। অন্যের জমিতে কাজ করে কষ্টে চালাচ্ছে ৪ জনের সংসার, এর ওপর ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা চালানো তার জন্য বড় কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়ের ভালো ফলাফল এবং স্বপ্ন পূরণ এখন তার ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জন্য তিনি সহযোগিতা চান সকলের কাছে। মানছা অভাবী সংসারে মানুষ হলেও ছোট থেকেই ছিল মেধাবী আর এই জন্য দারিদ্রতা তার মেধাকে আটকাতে পারেনি। মানছা এবারে থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পয়েছে। সে চায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবা করতে। কিন্তু তার স্বপ্ন পূরণের বড় বাধা অভাব।
মোছাঃ ইয়ানুর বেগম উলিপুরের দক্ষিণ উমানন্দ মাটিয়াল এলাকার নুর মোহাম্মদ শেখের কন্যা। নুর মোহাম্মদ পেশায় একজন কৃষক। জমাজমি বলতে বাড়িভিটা। অন্যের জমিতে শ্রম দিয়েই ৪ জনের সংসার চালানোই বড় কঠিন হয়ে দাঁড়ালেও মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ বানাতে চায় আর এই জন্য তিনি সকলের সাহায্য কামনা করছেন। ইয়ানুর বেগম এবারে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দারিদ্রতাকে হার মানিয়ে অর্জন করেছেন ভালো ফলাফল। ইয়ানুর চায় পড়াশোনা চালাতে, চায় একজন সেবিকা (নার্স) হয়ে সেবা করতে। স্বপ্ন পূরণ করতে চায় বাবা-মায়ের এবং এলাকাবাসীর।
আফিয়া আক্তার বৃষ্টি চিলমারীর মাছাবান্দা এলাকার বাবলু শেখের কন্যা। বাবলু শেখ পেশায় একজন কৃষক। শ্রম বিক্রি করেই ৪ জনের সংসার কষ্টে চালিয়ে নিচ্ছেন। এর ওপর মেয়ের পড়াশোনা চালানো তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। মেয়ের ভালো ফলাফল শুনেও খুশি হতে পারেনি, কারণ হচ্ছে মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন কিভাবে। এখন এই চিন্তা তাকে ফেলিয়েছে বিপাকে। আফিয়া থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন এবং উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একজন নার্স হয়ে সেবায় নিয়োজিত থাকতে চান আর এই জন্য সকলের সহযোগিতা চান আফিয়া।
মোছাঃ খাদিজা বেগম চিলমারীর সবুজ পাড়া এলাকার আব্দুল হকের কন্যা। বাবা আব্দুল হক একজন দিনমজুর। দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে ৫ জন সদস্য। দিন শেষে যা মজুরি পান তা দিয়ে সংসার চালানোই কষ্টের, এর ওপর মেয়ের প্রকৌশলী হওয়ার চিন্তা তাকে ফেলিয়েছে চিন্তায়। কিভাবে মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করবে বা সংসার চালাবে এই চিন্তায় দিন কাটছে আব্দুল হকের। খাদিজা এবারে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে থানাহাট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। সে পড়াশোনা করতে চায়, চায় প্রকৌশলী হয়ে দেশের এবং মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে। কিন্তু তার স্বপ্নের বাধা দারিদ্রতা। মেয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য তার পিতা সকলের সহযোগিতা চান।