অনলাইন ডেস্ক:-
ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যার ১,০০০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ন্যায়বিচার অধরা।
আল-জাজিরার অভিজ্ঞ সাংবাদিক শিরিন ২০২২ সালের ১১ মে নিহত হন। তিনি পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার সংবাদ প্রচার করছিলেন। স্পষ্ট 'প্রেস' লেখা ভেস্ট ও হেলমেট পরিহিত থাকার পরও তাকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয় বলে আল-জাজিরার দাবি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘের তদন্তেও উঠে এসেছে—ইসরায়েলি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে শিরিনকে হত্যা করেছে। ২৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রিপোর্টিং করা এই ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক হত্যার সময় সংঘর্ষ বা ক্রস-ফায়ারের আওতার বাইরে ছিলেন। তার সহকর্মীরাও নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছিলেন। তবুও, ইসরায়েলি সেনারা ২০০ মিটার দূর থেকে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে।
স্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক কোনো আদালত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রাথমিকভাবে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করলেও পরে ইসরায়েল স্বীকার করে যে শিরিন ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হন, তবে একে 'দুর্ঘটনা' বলে দাবি করে। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা জানায়, এ ঘটনায় কোনো তদন্ত করবে না, কারণ এতে দেশের অভ্যন্তরে সমালোচনা হতে পারে। এক বছর পর ইসরায়েলি সেনা মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি 'গভীর দুঃখ' প্রকাশ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
প্রথমদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শিরিন হত্যার বিচার চাইলেও ইসরায়েলের দুঃখ প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র তদন্তের তাগিদ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচারের আশায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিলেও কোনো কার্যকর ফল মেলেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেনসিক বিশ্লেষণে বলা হয়, হত্যার কাজে ব্যবহৃত বুলেট এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে কোনো তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
বিভিন্ন স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ও তদন্ত সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে শিরিনকে হত্যা করেছে। ২০২২ সালের মে মাসে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিরিনকে সরাসরি টার্গেট করেছিল ইসরায়েলি সেনারা। একই বছরের সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিনি সংস্থা আল-হক এবং ব্রিটিশ সংস্থা ফরেনসিক আর্কিটেকচারের যৌথ তদন্তেও একই তথ্য উঠে আসে।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে আল-জাজিরা ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে আইসিসিতে মামলা করার অনুরোধ জানায়। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান, ভিডিও ফুটেজ ও নতুন আলামত সংযুক্ত করে ছয় মাসব্যাপী অনুসন্ধান প্রতিবেদনও আদালতে জমা দেওয়া হয়। শিরিনের পরিবারও মামলা করে। কিন্তু এখনো আইসিসি কোনো তদন্ত শুরু করেনি।
২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন জানায়, শিরিনকে টার্গেট করে ইসরায়েলি বাহিনী অযৌক্তিক বলপ্রয়োগ করেছে এবং এতে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট জড়িত। তদন্তে আটজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন আইসিসিকে দেওয়া হলেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
শিরিন আবু আকলেহ হত্যার ১,০০০ দিন পরও ন্যায়বিচার অধরাই রয়ে গেছে, আর ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।