বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন মিসরের আল-আজহারে
প্রকাশকালঃ
২৯ মে ২০২৩ ১২:৩২ অপরাহ্ণ ১৪৩ বার পঠিত
মিসরের বিশ্বখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মাওলানা ড. আবদুল হামিদ। গতকাল বুধবার (২৪ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক অ্যান্ড এরাবিক স্ট্যাডিজ অনুষদের তাফসির অ্যান্ড কোরানিক সাইন্স বিভাগের অধীনে অনুষ্ঠিত একাডেমিক সভায় তিনি তাঁর গবেষণা অভিসন্দর্ভ (থিসিস) পর্যালোচনা সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিল ‘তাফসিরুল মানারের দুই লেখকের পক্ষ থেকে ইমাম বায়জাবি (মৃত্যু ৬৮৫ হি.), ইমাম আবুস সাউদ (মৃত্যু ৯৮২ হি.) ও ইমাম আলুসি (মৃত্যু ১২৭০ হি.) প্রমুখের ওপর আরোপিত অভিযোগ : সংকলন ও পর্যালোচনামূলক বিশ্লেষণ।’
এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন থিসিসের প্রধান সুপারভাইজার তাফসির অ্যান্ড কোরানিক সাইন্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. জাকি মুহাম্মদ আবু সারি ও একই বিভাগের সাবেক ডিন ড. মুহাম্মদ জানাতি আবদুর রহমান।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের সাবেক প্রধান ড. মাহমুদ খলিফা মাহমুদ।
পিএইচডি গবেষণার বিষয়বস্তু নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. আবদুল হামিদ বলেন, এমফিল গবেষণার সময় বিষয় নির্বাচন প্রসঙ্গে আমার শ্রদ্ধেয় মেজো ভাই বাংলাদেশের সুপরিচিত আলেম মাওলানা আবদুল মালেকের সঙ্গে আলাপ করি। প্রায় এক যুগ আগে এক চিঠিতে তিনি আমাকে আধুনিক যুগের দুই ইসলামী ব্যক্তিত্ব শায়খ মুহাম্মাদ আবদুহু ও শায়খ রশিদ রেজা রচিত তাফসির গ্রন্থ ‘তাফসিরুল মানার’ নিয়ে পর্যালোচনামূলক গবেষণাপত্র লিখতে উৎসাহ দেন। মূলত শ্রদ্ধেয় ভাইয়ের পরামর্শেই এই বিষয়ে পিএইচডি গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নিই।
থিসিস পর্যালোচনাকালে ড. আবদুল হামিদ তাঁর পিএইচডি গবেষণার সহকারী তত্ত্বাবধায়ক শায়খ ড. মুহাম্মাদি আবদুর রহমান (রহ.)-এর কথা বিনীতভাবে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, শায়খ ড. মুহাম্মাদি ছিলেন আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ আলেমদের একজন। কয়েক মাস আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। আশির দশকে তিনি আল-আজহারের মসজিদে বসে পাঠদান করতেন।
গবেষণার ক্ষেত্রে তার সহযোগিতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একদিন শায়খের স্ত্রী জানান, আবদুল হামিদ, শায়খ তোমাকে যতটা ভালোবাসেন আমি কোনো ছাত্রকে এতটা ভালোবাসতে দেখিনি। তিনি তার বাসার দরজা তোমার জন্য যতটা উন্মুক্ত রেখেছেন, অন্য কাউকে তিনি এতটা সময় ও সুযোগ দেননি।
থিসিসের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. জাকি মুহাম্মাদ আবু সারির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহ শায়খকে উত্তম বিনিময় দিন। তিনি যখনই আমাকে কোনো বই উপহার দিতেন তখন বইয়ের প্রথম পাতায় লিখতেন ‘মিনাল ওয়ালিদ ইলাল ইবনি’।
অর্থাৎ পিতার পক্ষ থেকে পুত্রের জন্য। তাছাড়া তিনি পিতা-মাতার পাশাপাশি বড় ভাই মুফতি আবুল হাসান আবদুল্লাহ ও মেজো ভাই মাওলানা আবদুল মালেকসহ সব শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
উল্লেখ্য, মাওলানা ড. আবদুল হামিদ কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ থানার সরসপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা শামসুল হক (রহ.) ছিলেন চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া খেড়িহর মাদরাসার পরিচালক। প্রবীণ আলেম ও নানা বিষয়ে পাণ্ডিত্ব থাকায় তিনি দেশের আলেমদের কাছে সুপরিচিত। মাওলানা শামসুল হক (রহ.)-এর পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ড. আবদুল হামিদ পঞ্চম। তাঁর অন্য ভাইয়েরা হলেন- মুফতি আবুল হাসান আবদুল্লাহ, মাওলানা আবদুল মালেক, মাওলানা আবদুল মাজিদ ও মাওলানা আবদুল আলিম।
ড. আবদুল হামিদ মায়ের কাছে প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। মায়ের কাছেই তিনি পবিত্র কোরআনের পাঁচ পারা হিফজ করে বাবার পরিচালিত মাদরাসায় বাকি অংশ সম্পন্ন করেন। এরপর কেরানিগঞ্জের হাফিজিয়া ইমদাদিয়া মাদরাসায় হাফেজ আবদুর রহমান (রহ.)-এর কাছে পুরো কোরআন শোনান। এরপর রাজধানীর লালমাটিয়া মাদরাসায় এক বছর পড়ে আবার খেড়িহর মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাবার তত্ত্বাবধানে শরহে বেকায়া পর্যন্ত পড়েন। ২০০৪ সালে তিনি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ায় থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালে মোহাম্মাদপুরের আল-মারকাজুল ইসলামি থেকে আরবি ভাষা বিষয়ক কোর্স এবং ২০০৬ সালে মিরপুরের দারুল রশাদ থেকে সাংবাদিকতা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করেন। একই বছর তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসা থেকে পুনরায় দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষায় অংশ নেন।
২০০৭ সালে তিনি পটিয়া মাদরাসার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির সূত্রে উচ্চশিক্ষা অর্জনে মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ি জমান। ২০১১ সালে তিনি আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক অ্যান্ড অ্যারাবিক স্ট্যাডিজ অনুষদ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এবং ২০১৩ সালে একই অনুষদের তাফসির অ্যান্ড কোরানিক সাইন্স বিভাগ থেকে স্নাতোকত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ২০১৭ সালে এমফিল গবেষণা সম্পন্ন করেন। ২০১৮ সালে পিএইচডি থিসিসের বিষয়বস্তু চূড়ান্ত করেন।