স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতেই ভক্তদের ভিড়ে আটকে গেলেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। তবুও মুখে প্রশান্ত হাসি, একে একে সবার সেলফির আবদার মেটাচ্ছেন। কথায় ফুটে উঠছে আত্মবিশ্বাস, আচরণে বিনয়। কখনও সিলেটি ভাষায়, কখনও ইংরেজিতে সহজভাবে উত্তর দিচ্ছেন লিস্টার সিটির এ তারকা ফুটবলার।
বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন প্রাণ এনে দেওয়া এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে অনেকে ইতিমধ্যেই তুলনা করছেন লিওনেল মেসির সঙ্গে। তবে মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে হামজা নিজেকে ‘বাংলাদেশের মেসি’ হিসেবে মানতে একেবারেই রাজি নন। তাঁর মতে, ফুটবল কোনো ব্যক্তির নয়, বরং দলীয় প্রচেষ্টার ফল।
হামজার ভাষায়,
“অবশ্যই না— আমি এই দলের মেসি নই। ফুটবল একক নয়, এটি দলীয় খেলা। এমনকি যদি মেসিও বাংলাদেশ দলে খেলতেন, তবুও আমাদের ট্যাকটিকস ও টিম স্পিরিট গড়ে তুলতে সময় লাগত। কারণ ফুটবল কখনোই একজনের উপর নির্ভর করে না, বিশেষ করে আমার ক্ষেত্রে নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— আমরা জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকি। ইনশাল্লাহ, এক জাতি হিসেবে আমরা সফল হব। সবাইকে ধন্যবাদ।”
আগামী বৃহস্পতিবার এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে হংকং চায়নার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বাছাইয়ের ‘সি’ গ্রুপে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে হংকং, আর ভারতের সমান ১ পয়েন্টে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে। তবে হোমগ্রাউন্ডে ম্যাচ এবং দলে হামজার উপস্থিতি ফুটবলপ্রেমীদের মনে জয়ের আশার আলো জ্বালিয়েছে।
হামজাও আশাবাদী—
“আমাদের জয়ের ভালো সম্ভাবনা আছে। কোচের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, উনি বলেছেন আমাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আমাদের প্রতিভা আছে, আমরা কঠোর অনুশীলন করছি, আক্রমণাত্মক খেলতেও পারি। এই ম্যাচ জিততে পারলে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে, এবং আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব।”
হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দলের মধ্যমাঠের নির্ভরতার নাম হামজা। কোচ সম্প্রতি বলেছেন, তিনি হামজাকে শুধু রক্ষণের নয়, আক্রমণেও ভূমিকা রাখতে দেখতে চান। জবাবে ইংল্যান্ডপ্রবাসী এই মিডফিল্ডার বলেন,
“একজন মিডফিল্ডারের কাজই হলো রক্ষণ ও আক্রমণ— দুই দিক সামলানো। আমি প্রস্তুত, কারণ এটা দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।”
বাছাইপর্বে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় হোম ম্যাচ। গত জুনে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ২-১ গোলের হার এখনো পোড়ায় হামজাকে—
“সিঙ্গাপুর ম্যাচে আমরা নিজেদেরই হতাশ করেছি। দুই গোল হজম করা আমাদের বড় ভুল ছিল। রক্ষণে আরও ভালো করতে পারলে হয়তো সেই হার এড়ানো যেত।”
বিনয়, আত্মবিশ্বাস আর দলীয় চেতনা— এই তিন গুণেই যেন ফুটে উঠেছে হামজা চৌধুরীর প্রকৃত নেতৃত্ব। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, ফুটবল কখনো একার খেলা নয়— এটি পুরো জাতির স্বপ্ন ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতিফলন।